বগুড়া’র কাহালুতে সিমেন্টের বস্তায় আদা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কৃষক করিম
কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়া’র কাহালু উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণে মালঞ্চা ঈদগাঁ মাঠ পাড়ার বাসিন্দা আদর্শ কৃষক আব্দুল করিম আকন্দ (৫৫) তার বাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় আড়াই হাজার সিমেন্টের বস্তায় আদা চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন।
কৃষক আব্দুল করিম ধান, গম, সরিষা, আলু থেকে শুরু করে বাঁশের মাঁচায় কীটনাশক মুক্ত লাউ, কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া ,সীম, ফুলকপি, বেগুন, তরমুজ, বাঙ্গী, কলা, পেঁপে ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার শাক সবজির চাষ করে কৃষি ক্ষেত্রে ব্যপক সফলতা অর্জন করায় তিনি উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় কৃষি সপ্তাহ এবং কৃষি মেলায় সরকারিভাবে ৪ বার পুরস্কৃত হয়েছেন।
কৃষক আব্দুল করিম দীর্ঘ দিন ধরে কৃষি পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। কৃষি ফসল ছাড়াও আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, লিচু, পেয়ারা, মেওয়াফল, ডাব সুপারীসহ আরোও নানা রকমের ফল গাছ রয়েছে তার বাড়িতে।
উত্তরাঞ্চলের কৃষদের আদা চাষের প্রতি তেমন একটা আগ্রহ নেই। এ বিষয়ে আব্দুল করিম অনলাইনে সিমেন্টের বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতির প্রতিবেদন দেখে আদা চাষের প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন। অবশেষে কাহালু উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে অভিজ্ঞতা ছাড়াই সাহস নিয়ে আদা চাষে নেমে পড়েন। আদা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো প্রতি বছরের এপ্রিল মাসে।
কৃষক করিম সেই মতে প্রথমে আড়াই হাজার সিমেন্টের ফাাঁকা বস্তা কেনেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট গাজীপুর থেকে দেশী বারী-২ জাতের ৩২০ টাকা কেজি দরে ১২০ কেজি বীজ আদা সংগ্রহ করে অঙ্কুরিত করার জন্য বাড়িতে রেখে দেন।
আদা অঙ্কুরিত হবার পর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তার বাড়ির খৈলান (খুলি) এবং আশেপাশে ছায়াযুক্ত স্থানে মাটির সাথে জৈব ও রাসায়নিক সার মিশ্রন করে সিমেন্টের বস্তায় পুরে বস্তাগুলো সারিবদ্ধ ভাবে সাজিয়ে প্রতি বস্তায় ৩ টুকরো করে অঙ্কুরিত আদা রেখে মাটি দিয়ে ঢেকে দেন।
সপ্তাহে খানেকের পর দেখতে পান আদার গাছ বের হওয়া শুরু করেছে। দিন দিন বাড়ছে গাছ। আদা লাগানোর ৫ মাস পেরিয়ে গেছে এখন গাছগুলো অনেক বড় হয়ে সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে বাড়ির উঠোনসহ আশে পাশের পরিত্যক্ত স্থান। তবে আদা ছায়াযুক্ত পরিত্যাক্ত,বসতবাড়ির চারদিকে ফাঁকা জায়গা, লবনাক্ত মাটিতে, ছাদে, ফল বাগানে স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে এর চাষ করা যায়।
আরও পড়ুনকৃষি জমিতে আদার চাষ করলে নানা ধরনের পচন রোগ দেখা দিয়ে থাকে। বস্তা বা টবে চাষ করলে বড় ধরনের কোন রোগ বালাই হবার মোটেও সম্ভাবনা থাকে না। এছাড়া আদার ফলন পেতে প্রায় দীর্ঘ ৯ মাস সময় অপেক্ষা করতে হয়।
আর জমিতে বছরে ৩ থেকে ৪ বার ফসল ফলানো যায়। অতিরিক্ত সময় লাগার কারনে দেশের কৃষকেরা জমিতে আদা চাষে তেমন একটা অগ্রহী নন। বাংলাদেশে আদা হলো একটি মসলা জাতীয় ফসল। কৃষক আব্দুল করিম জানান, আদা চাষ করতে প্রতি বস্তায় তার খরচ হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মতো। তিনি আশা করছেন প্রতি বস্তায় ১ থেকে দেড় কেজি আদার ফলন পাবেন।
তিনি বলেন আবহাওয়া ভাল থাকলে আগামি জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে আদা সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। আদা চাষে আড়াই হাজার বস্তায় তার মোট খরচ হয়েছে প্রায় সোয়া লাখ টাকা। তিনি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার ফলন পাবেন বলে আশা করছেন। আদা পরিপক্ক হলে গাছের পাতা ক্রমশ হলুদে হয়ে শুকাতে শুরু করে এরপর আদা উত্তোলন করতে হয়।
কৃষক আব্দুল করিম আরো জানান আদা চাষে কাহালু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস, মালঞ্চা ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম, উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা এস.এম আল-আমিন গুরুত্ব পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন।
কৃষক করিমের আদা চাষ করা সম্পর্কে উপজেলা কৃষি অফিসার জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, আমরা হয়তো তাকে অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করতে পারিনি তবে পরামর্শ আর সাহস দিয়ে সহায়তা করতে পেরেছি। চাষী করিমের মত এদেশের কৃষককুল যদি পরিত্যক্ত জায়গায় আদার চাষ করে তাহলে বাইরের দেশ থেকে আমাদের আর আদা আমদানি করার প্রয়োজন বা ২শ’/৩ শ’ টাকা কেজি দামে আদা কিনতে হবে না।
মন্তব্য করুন