বিরতিহীন বনলতায় লাগামহীন বিরতি

সিল্কসিটি, পদ্মা-ধুমকেতু এক্সপ্রেসেও বেড়েছে দুর্ভোগ

প্রকাশিত: জানুয়ারী ২৩, ২০২৩, ১০:৫১ রাত
আপডেট: জানুয়ারী ২৩, ২০২৩, ১০:৫১ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

রোজিনা সুলতানা রোজি, রাজশাহী: রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী অন্ত:নগর ট্রেনের কোনটি এখন আর নির্ধারিত সময়ে পৌঁছতে পারছে না গন্তব্যে। রাজশাহী-ঢাকা চলাচলকারী এসব ট্রেন অত্যাধিক জনপ্রিয় হলেও কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এসব ট্রেনে যাত্রী বাড়লেও এখন কমেছে সেবার মান।

বর্তমানে রাজশাহী-ঢাকা চারজোড়া আন্ত:নগর ট্রেন চলাচল করছে। এরমধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকামুখি বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিরতিহীন। এছাড়া সিল্কসিটি, ধুমকেতু ও পদ্মা এক্সপ্রেস চলাচল করে রাজশাহী-ঢাকা রুটে। এসব ট্রেনের কোনটি এখন আর নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। পুরোনো বগি ও যান্ত্রিক ক্রটি ছাড়াও এসব ট্রেনে এখন আর কাঙ্খিত সেবা মিলছে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি বিরতিহীন হলেও রাজশাহী থেকে ছাড়ার পর অন্য ট্রেনকে ক্রসিং দেয়া ছাড়াও স্টেশনে স্টেশনে অযথা বিরতি দিয়ে চলাচল করে। ফলে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। এ নিয়ে প্রতিনিয়তই যাত্রী অসন্তোষ বাড়ছে। ট্রেনে নিয়মিত চলাচলকারী যাত্রীরা বলেন, শুরুর দিকে রাজশাহী-ঢাকা অভিমুখি সব’কটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে চলাচল করতো।

তবে এখন নানা কারণে এসব ট্রেনের কোনটি নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারছে না। নির্ধারিত সময়ে স্টেশন ছাড়লেও পথের ভোগান্তির কারণে এ দশা চলছে দীর্ঘদিন ধরেই। তারপরেও নিরাপদ যাত্রা হওয়ায় এখনো ট্রেনকেই প্রথম পছন্দ হিসেবে বেছে নিচ্ছেন যাত্রীরা। রাতে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। এসব ট্রেনে এখন আর কোনো যাত্রীসেবার বালাই নেই। স্টেশনে স্টেশনে দাঁড়িয়ে ক্রসিংয়ের অজুহাতে কালক্ষেপণের কারণে বিনা টিকেটের যাত্রীদের আধিক্য বৃদ্ধ পেয়েছে। সাধারণ বগিগুলোতে সাধারণ যাত্রীদের দাঁড়ানোর উপায় থাকে না।

টয়লেটে যেতেও নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। যত্রতত্র যাত্রী ওঠার কারণে ট্রেনের লবি ও মেঝেতে বিক্ষিপ্তভাবে শুয়ে বসে চলাচল করে এসব যাত্রীরা। ফলে টিকেট কাটা যাত্রীদের চলাফেরা দায় হয়ে ওঠে। এসব ট্রেনের সেবা দেয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের নাগাল মিলে না। এসি কিংবা কেবিনের করিডোরেও যাত্রীদের অবাধ চলাচলে প্রতিনিয়ত যাত্রী বিড়ম্বনা বৃদ্ধি পেয়েছে।

যাত্রীদের অভিযোগ, শুরুতে এসব ট্রেনের যাত্রা ও যাত্রীসেবা খুব আয়েশের থাকলেও এখন এসব ট্রেনে আর যাত্রীসেবা নেই। এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে অযথা বিলম্ব। কোনো কেনো স্টেশনে ক্রসিং দেয়ার নামে এক থেকে দেড় ঘণ্টার বেশি বিলম্ব করতে হয় এসব ট্রেনের। এরমধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি লেগেই থাকে। সর্বশেষ শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী হয়ে ঢাকাগামী বিরতিহীন আন্তঃনগর এক্সপ্রেস বনলতা ট্রেনটি নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেলেও এ ট্রেনটি গন্তব্যে পৌঁছে নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পরে। এ কারণে ওইদিন সবকটি ট্রেন যাত্রা বিলম্বের কবলে পড়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, একটি বগির ভাঙা স্প্রিং নিয়েই চলছিল ট্রেনটি। এ কারণে মাঝপথে গিয়ে ট্রেনটি আটকে যায়। এরপর এক ঘণ্টা ধরে বগির স্প্রিংটি মেরামত করা হয়। এমন ঘটনা শুধু একদিনের নয়, এ ধরনের সমস্যা প্রায়ই হচ্ছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দাবি, নতুন বগি পরিবর্তন করে পুরোনো বগি সংযোজনের কারণে এখন এসমস্য হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেনটি সকাল ৬টায় ছেড়ে রাজশাহী আসে।

ট্রেনটি সকাল ৭টায় ঢাকার উদ্দেশে রাজশাহীর ছেড়ে যায়। ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু পশ্চিম স্টেশনে পৌঁছানোর পর চালক বুঝতে পারেন ট্রেনের কোনো বগিতে বড় সমস্যা হয়েছে। চেক করার পর দেখা যায় ‘জ’ বগির স্প্রিং পুরো ভেঙে গেছে। পরে বগিটি খুলে রেখে এক ঘণ্টা বিলম্বে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়।

রাজশাহী রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ট্রেনটির একটি বগির স্প্রিং ভেঙে যাওয়ায় বঙ্গবন্ধু পশ্চিম স্টেশনে ট্রেন চলাচল প্রায় এক ঘণ্টা বন্ধ ছিল। পরে সেই বগি রেখে পুনরায় যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিরতিহীন বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালুর সময় তাতে ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা নতুন বগি সংযোজন করা হয়েছিল। কিন্তু এর তিন মাস পর বনলতার নতুন বগিগুলো পাঠানো হয় পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের জন্য। পরে পুরোনো বগি দিয়ে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি চলাচল করছে।

এর ফলে প্রায়ই ট্রেনটি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। কখনো ইঞ্জিন বিকল তো কখনো চাকা ভেঙে যাওয়ার মতো গুরুতর ঘটনা ঘটছে। যাত্রী সাধারণ বিরতিহীন বনলতা ট্রেনে নতুন বগিগুলো পুনরায় সংযোজনের দাবি জানানো হয়েছে। রাজশাহী-ঢাকা অভিমুখি সিল্কসিটি, পদ্মা ও ধূমকেতু এক্সপ্রেসেরও এখন একই অবস্থা। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) অসীম কুমার তালুকদার জানান, এসব ট্রেনের যাত্রীসেবা বৃদ্ধির কাজ চলছে।

এছাড়া ট্রেনের পুরনো বগি বাদ দিয়ে উন্নতমানের বগি সংযোজনের চেষ্টা করা হচ্ছে। অচিরেই রাজশাহী-ঢাকামুখি সবকটি ট্রেনের গতি ও যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়