কৃষকের ফেলে যাওয়া আলু কুড়িয়ে মজুদ, মিটছে নিম্নবিত্তের চাহিদা

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৩, ০৭:২৫ বিকাল
আপডেট: ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২৩, ০৭:২৫ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

রুহুল ইসলাম রয়েল, গঙ্গাচড়া (রংপুর): চারদিকে কৃষকদের ক্ষেত থেকে আলু সংগ্রহ শুরু হয়েছে। অনেক জমিতে আলু সংগ্রহ করে নেওয়ার পর ফাঁকা হয়েছে ক্ষেত। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হতদরিদ্র পরিবারের শিশুদের সেইসব ক্ষেতে বেড়েছে আনাগোনা। এসব শিশুর পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা। এ কারণে আলু সংগ্রহে নেমেছে তারা। মালিকরা আলু তুলে নিয়ে যাওয়ার পরও মাটিতে কিছু আলু চাপা পড়ে থাকে।

বাশিলা, কোদাল, পাচুন, ছোট লাঙল হাতে অভাবের সময় পরিবারে সবজির যোগান দিতে মাটি খুঁড়ে সেই আলু বের করে আনছে তারা। কুড়ানো আলু বাড়িতে হাঁড়ি-পাতিলে রেখে, নয়তো বালুতে রেখে সারাবছর খাওয়ার জন্য সংরক্ষণ করে। কুড়ানো আলু দিয়ে মসলামাখা আলু সিদ্ধ, আলু ভর্তা করে খাওয়ার পাশাপাশি শিশুরা পিকনিক করেও খায়। দলবেঁধে আলু কুড়াতে আসা এদের কেউ স্কুলে, কেউবা মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে।

আলু কুড়াতে আসা উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের সয়রাবাড়ী গ্রামের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র রাব্বি (১০) বলে, আমার বাবা দিনমজুর। স্কুল ছুটির পর বিকেলে কোদাল আর ব্যাগ নিয়ে আলু কুড়াতে যাই। আলু কুড়িয়ে দিনে চার-পাঁচ কেজি আলু পাই। সব আলু যোগাড় করে আমাদের প্রায় এক বছরের খাওয়ার আলু হয়ে যায়। আমাদের আর আলু কেনা লাগে না।

সদর ইউনিয়নের পূর্ব নবনীদাস গ্রামের বন্যা রাণী (৯) বলে, ‘হামরা স্কুল থাকি আসি আলু কুড়াই। বাড়িত যেয়া আম্মুক দেই। আম্মু হামাক আলু সিদ্ধ করি দেয়, হামরা মজা করি খাই। বাকি আলুগুলা খাটের তলত বালু দিয়া থোয়, পরে তরকারি আন্দি (রান্না) খাবার জন্য’।

একই ইউনিয়নের পশ্চিম মান্দ্রাইন গ্রামের আলু চাষি ইউনুস আলী (৫০) বলেন, আমরা শ্রমিক দিয়ে আলু তুলি। আলু তোলার সময় অসতর্কতার কারণে কিছু কিছু আলু মাটিতে চাপা পড়ে। সেই চাপা পড়া আলু সংগ্রহ করে তারা। আলু তোলার আগে এরা ক্ষেতে প্রবেশ করতে পারে না। কৃষকেরা আলু নিয়ে যাওয়ার পর জমি তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তখন তারা কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে ভেতরে লুকিয়ে থাকা আলু বের করে আনে এবং পাশে থাকা ব্যাগে রাখে।

মাঝে-মধ্যে জমির মালিকের বকাঝকাও তাদের কপালে জোটে। যাদের জমিজমা নেই, কেবল তাদের পরিবারের সন্তানেরা এ কাজ করে সুখ পায়। এছাড়াও অন্য ফসল আবাদের জন্য আলুর জমি চাষ করার সময় হালের পেছনে পেছনে ছোটে এসব শিশুরা। এতে মাটিতে লুকিয়ে থাকা আলু বাইরে বেরিয়ে আসে। মহাআনন্দে এসব আলু তারা দলবেঁধে কুড়োয়।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবছর আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ১শ’ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২শ’ ৭০ হেক্টর বেশি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু আবাদ হয়েছে।

কৃষকেরা ক্ষেত থেকে আলু সংগ্রহ শুরু করেছে। ক্ষেতে এড়িয়ে যাওয়া আলু কুড়িয়ে অনেকেই পরিবারের সবজির চাহিদা মেটায়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়