বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি : আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ২০১৮ সালে নগরবাড়ী নৌবন্দরের জন্য ৫১৩ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে দুই বছর মেয়াদী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবি¬উটিএ)। প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ওই বছরে নির্মাণ কাজের মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়ানো হয়। তবে ২০২০ সালের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হলে নৌ-বন্দরের পরিধি যেমন বৃদ্ধি পেতো তেমনি অটোমেশন পদ্বতি যুক্ত হয়ে দ্রুত পণ্য খালাস করে ভোগান্তির অবসান হতো। তবে প্রথমেই বাধা হয়ে দাঁড়ায় বন্দরের বর্ধিত অংশের জমির মালিকানা নিয়ে। নির্ধারিত জায়গা ব্যক্তি মালিকানা জমি থাকায় ওই সকল জমির মালিকরা কাজে বাধা প্রদান করেন। এক পর্যায়ে বিআইডবি¬উটিএ ওই সকল ব্যক্তি মালিকানা জমি অধিগ্রহণ করতে বাধ্য হয়। ফলে শুরুতেই প্রকল্পের প্রাকল্লিত ব্যয়ের সাথে আরো যোগ হয় ৪০ কোটি টাকা। তারপর নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২০২০ সালের মধ্যে বন্দর নির্মাণের কাজ শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তারা প্রথম দফায় দুই বছর সময় বাড়িয়ে নিয়ে ২০২২ সালের মধ্যে বন্দর নির্মাণের কাজ শেষ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সে সময়ের মধ্যেও তারা নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি।
এবার দ্বিতীয় দফায় আরো দুই বছর সময় বাড়াতে বিআইডবি¬উটিএ’র কাছে আবেদন করেছেন তারা। সেই সাথে দাবি করেছেন নির্মাণ খরচ পুনঃমূল্যায়নের। সেখানে নির্মাণ সামগ্রীর উচ্চ মূল্যকে দায়ি করে ব্যয় বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে বিআইডবি¬উটিএ বলেছে ইতিমধ্যে বন্দরের ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প ব্যয় পুনঃনির্ধারণে তাদের কারিগরি দল কাজ করছে। এদিকে নির্মাণ কাজ ধীর গতিতে চলায় পণ্য আমদানি রপ্তানিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনায়। এ নিয়ে বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ও বার বার প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো নিয়ে সচেতন মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
বেড়া উপজেলার নগরবাড়ী নৌ-বন্দর সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক মেসার্স নওয়াপাড়া গ্রুপের প্রতিনিধি মো. আরমান হোসেন ও মেসার্স দেশ ট্রেডিং লি. এর প্রতিনিধি রাজিব হোসেনসহ বেশকয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা জানান, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবরাহের জন্য আমদানিকৃত সার, কয়লা, পাথরসহ অন্যান্য আমদানি পণ্য চট্টগ্রাম থেকে কার্গোজাহাজযোগে নগরবাড়ীতে আনা হয়। সেখান থেকে সড়ক পথে কম খরচে বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড় জেলাসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সরবারহ করা হয়ে থাকে। তবে বন্দর আধুনিকায়ন কাজ ধীরগতিতে চলমান থাকায় পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে। আমদানি কারকরা বাধ্য হয়ে সে সকল পণ্য দক্ষিণাঞ্চলে নৌ-বন্দর নওয়াপাড়া বন্দরে খালাস করছেন। নওয়াপাড়া থেকে সড়ক পথে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে পৌঁছাতে ট্রাক প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে তেমনি সময়ও অনেটাই বেশি লাগছে।
নগরবাড়ি ব্যাবসায়ী সমিতির সভাপতি একেএম রফিকউল্লাহ বলেন, স্বাভাবিকভাবে নগরবাড়ী নৌ-বন্দর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ কোটি টাকার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। তবে বন্দর আধুনিকায়নের কাজ শুরু হওয়ায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের স্বাভাবিকতায় অনেকটাই ভাটা পড়েছে।
প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজিমুদ্দিন পাঠান জানান, করোনাকালীণ কাজের ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে এছাড়া বর্ষাকালীণ কাজে প্রতিবন্ধকতা ও নির্মাণ সামগ্রীর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা যায়নি। তাই আবারও সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া বর্তমান বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রকল্পের ব্যয় পুনঃনির্ধারণের জন্য কারিগরি কমিটি কাজ করছে। প্রকল্পের কাজ ৬০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
বাংলাদেশ অভ্যান্তরিণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডবি¬উটিএর নগরবাড়ী বন্দর কর্মকর্তা মো. ওয়াকিল আহমেদ বলেন, একটি আধুনিক নৌ-বন্দর নির্মাণের লক্ষ্যে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে জেটি নির্মাণের কাজ এখনও বাকি রয়েছে। অটোমেশন পদ্ধতিতে বন্দরটি চালু হলে একসাথে ১০টি কার্গো-জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।