স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা অফিস : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক বলেন, “অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলি ছিলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সকল অনুপ্রেরণার উৎস”। মন্ত্রী আরও বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ কেন হয়েছিলো তা আমাদের সকলকেই জানতে হবে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে। ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর থেকে দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীরা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিরাট ভূমিকা রেখেছিল। যা মুক্তিকামী বাঙালি ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের স্বাধীনতা অর্জন করতে বিশেষ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল বাঙালির কয়েক হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় অর্জন।
শনিবার বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে গণহত্যা- নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের উদ্যোগে ‘বিদ্রোহী মার্চ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে স্বাধীন করবার জন্য তিরিশ লাখ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে, পাঁচ লক্ষাধিক নারীকে পাশবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, এক কোটি মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে জীবনরক্ষার জন্য প্রতিবেশী ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক জান্তার 'অপারেশন সার্চলাইট'-এর মাধ্যমে নৃশংসতম গণহত্যাযজ্ঞ আরম্ভের পর বাংলাদেশের বিপন্ন মানুষের জন্য ভারত সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়েছিল, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে সবরকম সহযোগিতা করেছে এবং নয় মাসের যুদ্ধে নৃশংস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে বাংলাদেশের মাটিতে আত্মসমর্পণে বাধ্য করেছে।”
অনুষ্ঠানে “আমার ও আমাদের একাত্তর” শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি, লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। সন্মানিত অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক ড. মুর্শিদা বিন্তে রহমান। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন গণহত্যা জাদুঘরের সভাপতি ও বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন গণহত্যা জাদুঘরের ট্রাস্টি স¤পাদক ড. চৌধুরী শহীদ কাদের। মূল প্রবন্ধে শাহরিয়ার কবির বলেন, সেই সময় আমি কৈশোর অতিক্রম করে উদ্দাম যৌবনের রোমাঞ্চকর অজানা সোপানে পদার্পণ করছি। আমার মানসগঠনের সেই সময়ে আন্দোলন ও সংঘাতমুখর এক ক্রান্তিকাল ১৯৭১ যুদ্ধ জাতির ইতিহাসের গৌরবময় অধ্যায় প্রত্যক্ষ ও অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল। এ মুক্তিযুদ্ধে আমরা একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র অর্জন করেছি তাতে আমাদের অপরিসীম মূল্য দিতে হয়েছে। পৃথিবীর অন্য কোনও জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এমন নজির পাওয়া যাবে না।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মুনতাসীর মামুন বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক পেশাজীবী সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং বিশিষ্ট নাগরিকরা ভারতে গিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন করেছেন, রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধ এবং রণাঙ্গনের বাইরে প্রচারযুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক জনমত সংগঠিত করেছেন রণাঙ্গনের সশস্ত্র যুদ্ধের চেয়ে প্রচারযুক্ত কম গুরুত্বপূর্ণ না হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সামরিক যুদ্ধ যে গুরুত্ব পেয়েছে, প্রচারযুদ্ধ তা পায়নি, একাত্তরের প্রচারযুদ্ধে এক বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা, যার উল্লেখ তারেক মাসুদের মুক্তির গান' এবং শাহরিয়ার করিবেরর ’মুক্তিযুদ্ধের গান' শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রের বাইরে খুব কমই হয়েছে।
আলোচনা সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গবেষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।