মেশিনের সাথে পাল্লা দিতে না পারলেও
রমজানে কাহালু উপজেলায় হাতে ভাজা মুড়ির কদর বেশি
কাহালু (বগুড়া) প্রতিনিধি : পবিত্র মাহে রমজানে বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলায় হাতে ভাজা মুড়ির কদর এবং চাহিদা বহুলাংশে বেড়ে গেছে। হাতে ভাজা মুড়িতে একমাত্র লবন ছাড়া অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার হয়না। তবে আধুনিক প্রযুক্তির মুড়ি ভাজার মেশিনের সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে পারছেনা কাহালু উপজেলার হাতে ভাজা মুড়ির কারিগরেরা।
এ উপজেলায় সর্বাধিক মুড়ি উৎপাদনের গ্রাম হিসেবেই পরিচিত গিরাইল নামের গ্রামটি। আগে এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবার মুড়ি তৈরির সাথে জড়িত ছিল। আর বাড়ির উৎপাদিত মুড়ি বগুড়া জেলা শহর থেকে শুরু করে হাট বাজার এবং গ্রামগঞ্জে বিক্রি হতো।
বর্তমানে এর ধারাবাহিকতা অনেকটায় কমে গেছে। একশ’ আগে থেকেই এ উপজেলা বেশ কিছু গ্রামে হাতে ভাজা তৈরি মুড়ির ব্যবসা চলে আসছে। কিন্তু কালের বিবর্তন আর আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন হাতে ভাজা মুড়ির কারিগররা তাদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করার পরও ন্যায্যমুল্য না পাবার কারণে তারা তাদের বাপ দাদার রেখে যাওয়া এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় নিজেদের আত্ননিয়োগ করেছে।
বর্তমানে উপজেলার গিরাইল, দামাই,কাইট,কানড়া,খাজলাল,মহেশপুর ও দুর্গাপুর গ্রামে কিছু সংখ্যক মুড়ির কারিগর রয়েছে। মুুড়ির প্রকৃত কারিগর হলো বাড়ির গৃহিণীরা। এরা সাংসারিক কাজের পাশাপাশি সংসারে একটু বাড়তি আয়ের আশায় এ কাজ করে থাকে।
সরেজমিনে কাহালু’র গিরাইল গ্রামে গিয়ে জানা যায় বর্তমানে গ্রামের স্বপন, ঝন্টু, প্রফুল্ল, চন্দন, পলাশ, শখা, বুধান, উত্তম ও ভবেশ এ পেশার সাথে জড়িত। প্রথম রমজান থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাটির চুলায় মুড়ি ভাজার কাজ চলে। মুড়ি ব্যবসায়ী স্বপন জানায়, আগে ধান সিদ্ধ করে মিলে চাল তৈরি করার পর তা আবার লবন দিয়ে প্রসেসিং করে মুড়ি ভাজতে হতো।
বেশ ক’বছর থেকে মুড়ি তৈরির জন্য একবারে মিলের রেডিমেট প্রসেসিং করা চাল পাওয়া যায়। যার কারণে তাদের খাটুনি কমে গেছে। স্বপন আরও জানায়, বর্তমানে ৫০ কেজির এক বস্তা রেডিমেট প্রসেসিং করা মুড়ি তৈরি চালের দাম ২ হাজার ৭’শ টাকা। এক বস্তা চালে ৪৩/৪৪ কেজি মুড়ি পাওয়া যায়। এক বস্তা চালের মুড়ি তৈরি করতে ৬ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে থাকে।
আরও পড়ুনদিনে দেড় বস্তা চালের বেশি মুড়ি ভাজা যায়না। বর্তমানে হাতে তৈরি মুড়ি পাইকারি প্রতি কেজি ৭৮ টাকা এবং খুচরা ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। গিরাইল গ্রামের উৎপাদিত মুড়ি কাহালু বাজারসহ বিবিরপুকুর হাট এবং বগুড়া শহরে পাইকারি ও খুচরা দামে বিক্রি করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন গিরাইল গ্রামে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মন মুড়ি উৎপাদন হয় বলে জানা যায়।
গিরাইল গ্রামের মুড়ি ব্যবসায়ীরা জানান মেশিনের তৈরি মুড়িকে সাদা ধবধবে করার জন্য মানবদেহের ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর সে মুড়ির দামও বেশি। মেশিনের ২শ’ গ্রামের এক প্যাকেট মুড়ির দাম ২০ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলেন তাদের হাতে ভাজা মুড়ি একেবারে নির্ভেজাল এবং নিরাপদ।
তারা বলেন আর বিশেষ করে রমজান মাসেই ইফতারের জন্য হাতে ভাজা এ মুড়ির চাহিদা বেশি থাকলেও পুঁজির অভাবে কেউ ভালভাবে ব্যবসা করতে পারছেনা। এছাড়া সরকারি ভাবেও ব্যবসার ক্ষেত্রে তেমন একটা সুযোগ সুবিধে পায়না।
তবু অনেক কষ্টের পরও গিরাইল গ্রাম সহ উপজেলার উল্লেখিত গ্রামের মুড়ির কারিগরগণ তাদের পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া এ পেশা আজও ছাড়তে পারেনি।
মন্তব্য করুন