প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো বিমান বন্দর কিংবা স্থল বন্দরে সোনা চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। এতে চোরাচালানিরা ধরা পড়ছে আবার কখনও তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় এসব নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলেও সোনা চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই) ও শুল্ক গোয়েন্দার অভিযানে সিলেট ওসমানী বিমান বন্দরে দুবাই থেকে আসা এক যাত্রীর লাগেজ থেকে প্রায় ১৬ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আটক হয়েছে এক যাত্রী। বুধবার সকালে দুবাই থেকে সিলেটে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সের এক যাত্রীর লাগেজে তল্লাশি চালিয়ে তিনটি জুসার ও ব্লেন্ডারের ভেতর লুকিয়ে রাখা এই সোনা উদ্ধার করা হয়।
সোনা বহনকারী যাত্রীকে আটকের কথা জানান সিলেট কাস্টমসে, ভ্যাট ও এক্সসাইজ কমিশনারেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (সিলেট বিমানবন্দর) সাজেদুল করিম। তিনি জানান, আটক হওয়া যাত্রীর নাম হোসাইন আহমদ। তিনি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার গোমরাকান্দি গ্রামের বাসিন্দা।
তিনটি জুসার ও ব্লেন্ডারের ভেতর ১০৫টি সোনার বার এবং গলিয়ে গোল সিলিন্ডারের আকৃতি দেওয়া চারটি সোনার খন্ড বহন করছিলেন তিনি। সব মিলিয়ে এই সোনার ওজন প্রায় ১৬ কেজি। আটককৃত সোনার মূল্য প্রায় ১৭ কোটি টাকা।
সোনা চোরাচালানিরা বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পত্র-পত্রিকার খবরে উঠে এসেছে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৪ কোটি ৪০ লাখ রুপি বা ৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার বেশি সোনা ও রূপা জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বিজয়পুর ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৪ কোটি ৩২ লাখ রুপির সোনা ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে ৮ লাখ ৩৬ হাজার রুপির রূপ পাচারকালে জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
ভৌগলিক দিক থেকে দেশের বৃহৎ স্থল বন্দর এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত চেক পোস্ট বেনাপোল স্থল বন্দরে চোরাচালানিদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে। বেনাপোল হয়ে ঢাকা-কলকাতা রুটে কম খরচে এবং অল্প সময়ে যাতায়াত করেন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার যাত্রী। সোনা চোরাচালানের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চক্র এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুট দিয়ে সোনা পাচার হয়। বিষয়টি সবার জন্যই উদ্বেগের।
সোনা চোরাচালানিদের রয়েছে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক। দুর্বৃত্তদের সঙ্গে অনেক সময় বন্দরে কর্মকর্তাদের যোগসাজশেরও প্রমাণ পাওয়া যায়। বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটক করলেও আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে জেল হাজত থেকে বের হয়ে এসে তারা ফের অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যায়। এমন সংবাদ কতটা উদ্বেগের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এর আগে এমন খবরও সামনে এসেছে, যাদের চোরাচালান রোধ করার দায়িত্ব তাদের মধ্যে কেউ কেউ অবলীলায় জড়িয়ে পড়ছে সোনা চোরাচালান চক্রের সঙ্গে। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি চক্রের সন্ধান পেয়েছিল গোয়েন্দারা। আমরা মনে করি সোনা চোরাচালান সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
দেশের বিমান বন্দরগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থই এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। ইতোপূর্বে আপন জুয়েলার্স থেকে ১৫ মণ সোনা উদ্ধারের ঘটনা দেশের অভ্যন্তরে এ খাতে তীক্ষ্ম নজর রাখার দায়িত্ব সৃষ্টি করেছে। চোরাকারবারিদের প্রতি কঠোর হওয়ার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।