ফারজানা ইসলাম
সাধারণ অর্থে 'নিরপেক্ষ' বলতে বোঝায় আমি ঠিক নির্ধারণ করতে পারছি না। তবে সাদা চোখে যা বুঝি তা হচ্ছে, কোনো নির্দিষ্ট পক্ষ অবলম্বন না করে সঠিক বেঠিক বিবেচনা করা। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে নিরপেক্ষ থাকার অবকাশ আছে বলে আমি মনে করি না।
এই দেশটি অনেকগুলি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। লড়াই করে পেয়েছে ভাষার অধিকার, লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে পেয়েছে স্বাধীনতা ও সার্বভৌম পরিচয়। সর্বোপরি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনেও শত শত প্রাণের বিনিময়ে ফিরে পেয়েছে ছাত্রদের ন্যায্য অধিকার।
তাই এখানে আছে শত্রু-মিত্রের লড়াই। বাইরের শত্রুকে পরাজিত করে দেশটি যেমন ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয় ঠিক তার বিপরীতে রয়ে গেছে তার ভিতরের পরিচিত ও অপরিচিত শত্রু। আর ঠিক এই কারণেই বাংলাদেশে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখা মানে একটি সুবিধাবাদী অবস্থান যেখানে আপনার কোনো পক্ষকেই খুশি বা অখুশি করার চিন্তা থাকে না, ক্ষমতার রদবদলে নিজের সুবিধাজনক অবস্থানের পরিবর্তনের ঝুঁকিও থাকে না।
তবে আমি মনে করি, ঠিক এই মুহূর্তে যখন বাংলাদেশ তার চিহ্নিত শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, এক নতুন সূর্যোদয়ের পথে হাঁটছে তখন কেমন করে একজন নাগরিক নিরপেক্ষ থাকতে পারে? এই মুহূর্তে দেশ দুটি পক্ষে বিভক্ত এবং তা পরিষ্কার।
এর মাঝে কোনো প্রকার 'যদি', 'কিন্তু' থাকতে পারে না। হয় আপনি নতুন অগ্রযাত্রার পক্ষে আর না হয় দেশের শত্রুদের পক্ষে। আর যারা এই দুই পক্ষের মাঝামাঝি অবস্থান করতে চায় তারাই হচ্ছে সেই তথাকথিত 'নিরপেক্ষ' লেবাসধারী গ্রুপ; অন্য কথায় বিশেষ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা দল।
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে একজন বাংলাদেশি সে যেই পেশাতেই থাকুন না কেন, তাকে নির্ধারণ করতে হবে তিনি কী চান। আপনাকে নির্ধারণ করতে হবে আপনার কথা বা অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আপনি কাকে শক্তিশালী করতে চান? আপনার এই সঠিক পক্ষটি বেছে নেওয়ার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক অগ্রগতির সিদ্ধান্ত। সেই সঠিক পক্ষ হচ্ছে দেশের পক্ষ।
আপনি চান আর না চান, আপনি কোনো না কোনো পক্ষ অবলম্বন করেই নিজেকে প্রকাশ করতে চান। বাংলাদেশের মতো দেশের নাগরিকদের কোনোভাবেই নিরপেক্ষ থাকার অবকাশ নেই। তবে হ্যাঁ, আপনাকে দেখতে হবে, আপনার মতের দ্বারা যেন সমাজে কোনো নেতিবাচক প্রভাব গড়ে না ওঠে।
আজকে সময় এসেছে আমরা নাগরিকরা কোন পক্ষের হব তা ভাবার, আমি আমার মত কীভাবে প্রকাশ করব, কীভাবে আমি একটি সংবাদ প্রচার ও প্রসারে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিব। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রয়োজন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সঠিক পক্ষ অবলম্বনকারীদের যৌথ অবস্থান।
নিরপেক্ষতার আড়ালে সুবিধাবাদীদের দলে নাম লিখানোর দিন মনে হয় আর নেই। সোজা লাইনে আসতে হবে আমাদের। মাঝামাঝির স্থান নেই। তাই আসুন, নিরপেক্ষ নই, সঠিক পক্ষ বেছে নিই এবং সে পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। জয়ের ধারা বাঁচিয়ে রাখি নিরন্তর। জনতার জয় অনিবার্য।
লেখক : শিক্ষার্থী ও ফিচার লেখক
রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী
সহযোগী সদস্য, রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটি।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।