ভিডিও বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫

রেলওয়ে দুর্নীতিমুক্ত হোক

রেলওয়ে দুর্নীতিমুক্ত হোক

কথায় বলে গরজ বড় বালাই। আমরা কেউ কেউ চাই বা না চাই, ১৮ কোটি মানুষের দেশে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমে পরিণত হয়েছে রেল। যোগাযোগের ক্ষেত্রে নদী ও সড়ক পথের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও সাশ্রয়ী ও কম ঝুঁকির কারণে রেলই বলা চলে সাধারণ মানুষের কাছে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এটা ঠিক, স্বাধীনতার পাঁচ দশকে যেভাবে রেলওয়েকে গড়ে তোলা প্রয়োজন ছিল, সেভাবে গড়ে তোলা যায়নি।

অথচ রেলের উন্নয়নের পেছনে বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় বহন করা সত্ত্বেও দেশে ট্রেনের গতি যেমন বাড়েনি, তেমনি বাড়েনি যাত্রী সেবার মান। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে রেলের উন্নয়ন পরিকল্পনার মান নিয়ে। কোনো পদক্ষেপের পেছনে যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে তাতে অর্থেরই কেবল অপচয় হয় না, এর সুফলও পায়না জনগণ।

বাংলাদেশ রেলওয়ের হয়েছে সেই দশা। গত এক যুগে ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে ৭৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। কিন্তু এরপরও রেলের গতি তো বাড়েইনি, বরং আগের চেয়ে কমেছে। দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে এই খাতটি। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, রেলখাতে দুর্নীতির পরিমাণ প্রকট।

উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি, কেনাকাটায় দুর্নীতি-ওপেন সিক্রেট। লাইনচ্যুত ট্রেনের চাকা বা দেবে যাওয়া রেল লাইন ওপরের দিকে তোলার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র ‘লিফটিং জ্যাক’ ভারত থেকে আমদানি করলে খরচ পড়ে মাত্র ১৯ হাজার টাকা। কিন্তু এই যন্ত্র ঠিকাদারদের কাছ থেকে রেলওয়ে কিনেছে ৩ লক্ষ টাকায়।

৬৫ হাজার টাকার একটি ড্রিলিং মেশিন কেনা হয়েছে ৯ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকায়। ‘কাটিং ডিস্ক’ নামের আরেকটি যন্ত্র কেনা হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে ৮ গুণ বেশি দামে। ঠিকাদারের মাধ্যমে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের (চট্টগ্রাম) অধীন ট্রাক সাপ্লাই কর্মকর্তার (টিএসও) কার্যালয় চার ধরনের মোট ২৮টি যন্ত্র কিনেছে। এসব যন্ত্রের প্রকৃত বাজার মূল্য সাড়ে ১৮ লাখ টাকা

অথচ এগুলো কিনতে ব্যয় করা হয়েছে ২ কোটি টাকা। মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় গত জুনে যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দেখা গেছে বাজারের চেয়ে ১৫-২০ গুণ বেশি দাম দিয়ে রেলওয়ে নানা যন্ত্রপাতি কিনেছে। ২০১০ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হওয়ার সময় চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুম ঘুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন

এই প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই ২০১৬ সালে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে প্রকল্প ব্যয় এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। নির্মাণ শুরুর আগেই প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায় ১০ গুণ যা ১৬ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। অস্বাভাবিক ব্যয় বাড়ানোর পরও এই প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ ও নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

দুর্নীতিমুক্ত সেবা খাত বাস্তবায়নে লোক দেখানো নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও গত ১৫ বছরে রেলের দুর্নীতি সামান্য কমানো যায়নি। বরং এ সময় তা হু হু করে বেড়েছে। তবে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে যারা দোষী প্রমাণিত হয়েছে তারা বরাবরই থেকেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। কেউ কেউ আবার দুর্নীতির মামলায় জেল খেটেও আসীন হয়েছেন।

এ ছাড়া রেলের জমি নিয়ে মারাত্মক দুর্নীতি রয়েছে। দেশে রেলের ৩ হাজার ৬১৪ একর জমি বেদখল হয়েছে। এর বাইরে ১ হাজার ৮৪১ একর জমির কোনো হদিসই নেই। দখলবাজরা এসব জমির দলিল, পর্চা ও নথি গায়েব করে দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এ নথি গায়েব কান্ডে জড়িত রেলওয়ের ভূ সম্পত্তি বিভাগ, রেলভবন থেকে শুরু করে পূর্ব ও পশ্চিম রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তা।

তাদের যোগসাজশে এসব দখলবাজ জমি রেকর্ড করে নিয়েছেন নিজেদের নামে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫ হাজার ৪৫৫ একর জমিই এখন হাতছাড়া। সব সম্ভবের এই দেশে শুধু মানুষের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়, লাখ লাখ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি জবর দখলের কবলে পড়ে আছে বছরের পর বছর। এ লুটেরা আখ্যানের অবসান হওয়া উচিত।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে মোটরসাইকেল-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ১

পরপারে ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী

বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা জোট করতে চায় পাকিস্তান

পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার : আইজিপি

সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ 

আবারও ‘দাবিডি দিবিডি’ বিতর্কে জড়ালেন উর্বশী