মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে স্বর্ণা দাসের (১৪) মৃত্যুর ঘটনায় কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার রাতে এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানায় মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো প্রতিবাদ নোটে বাংলাদেশ এ ধরনের নির্মম কর্মকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে।
একই সঙ্গে এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নোটে বাংলাদেশ সরকার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে সীমান্ত হত্যার এ ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত এবং অযৌক্তিক। এ ধরনের পদক্ষেপ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত কর্তৃপক্ষের যৌথ নির্দেশিকা ১৯৭৫ বিধানের লঙ্ঘন। বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে আহবান জানিয়েছে।
পাশাপাশি সীমান্ত হত্যাকান্ডের তদন্ত, দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ। লক্ষ্যণীয় ফ্যাসিবাদি হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রথম ভারত সরকারের অন্যায় কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালো। যা বিগত দেড় দশকে বাংলাদেশের জনগণ কখনও দেখেনি। দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে প্রতিবাদ করা, সোচ্চার হওয়া প্রকৃত দেশ প্রেমিক সরকারের কাজ বলেই আমরা উচ্চ কন্ঠে সরকারের এই পদক্ষেপের প্রশংসা করি।
পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে স্বর্ণা দাস (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার শরীয়তপুর ইউনিয়নের লালারচক সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তবে সোমবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হয়। নিহত স্বর্ণা জেলার জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের পরেন্দ্র দাসের মেয়ে।
স্বর্ণা অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। স্বর্ণের বাবা পরেন্দ্র দাস জানান, ভারতের ত্রিপুরায় তার বড় ছেলে থাকেন। তাকে দেখতে স্বর্ণা ও তার মা রোববার রাতে স্থানীয় দুই দালালের সহযোগিতায় লালার চক সীমান্ত দিয়ে চোর্ইা পথে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেন। রাত ৯টার দিকে ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌছালে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাথারি গুলি চালায়।
এতে স্বর্ণা ঘটনাস্থলে মারা গেলেও ভাগ্যক্রমে স্বর্ণার মা বেঁচে যান। স্বর্ণা স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। গত মঙ্গলবার বিকেলে কুলাউড়ার চাতলাপুর সীমান্ত দিয়ে স্বর্ণার লাশ হস্তান্তর করা হয়। রাত সোয়া আটটার দিকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে স্বর্ণার লাশ বাড়িতে পৌছে। এ সময় বাড়িতে আহাজারি করতে দেখা যায় তার স্বজনদের। মেয়ের লাশ দেখে মা সঞ্জিতা রানী বারবার মুর্চ্ছা যাচ্ছিলেন। বিগত পনের বছর যাবত সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকান্ড বাংলাদেশের কত যে মায়ের বুক খালি হয়েছে তা অবর্ণনীয়।
ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী তথা বিএসএফ’র বাংলাদেশি হত্যা কোনোভাবেই থামছে না। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক নেতাই এই হত্যাবন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু বাস্তবে কোনো প্রতিশ্রুতিই কাজে আসছে না। সেগুলো যেন কেবলই কথার কথা।
নিরীহ ও নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যার প্রতিটি ঘটনা আমাদের হৃদয়কে শোকাভিভূত করে। সেই শোকবিধ্বস্ত হৃদয় নিয়েও বিগত হাসিনা সরকার ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষায় নতজানু পররাষ্ট্র নীতি মেনে চলে এসেছে এতদিন।
কিন্তুু ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের মাধ্যমে নবগঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এবার স্বাধীন পররাষ্ট্র নীতির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে- যা একটি দেশ প্রেমিক সরকারের প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ। আমরা মনে করি সীমান্ত হত্যা জাতীয়- এ ধরনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির দ্রুত অবসান জরুরি।
ভারত সরকারকে তার সীমান্তবর্তী বাহিনীর এই অপতৎপরতা বন্ধে আন্তরিক উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।