যে কোনো কারণেই জনজীবনে বিপর্যস্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি।
প্রসঙ্গত বলা দরকার, লোডশেডিং হলে তা জনজীবনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুযায়ী গত কয়েক দিন ধরে গড়ে প্রায় দেড় হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হচ্ছে। তবে প্রকৃত লোডশেডিংয়ের পরিমাণ আরও বেশি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
সপ্তাহ খানেক ধরে চলছে সারা দেশে লোড শেডিং। চলছে ভোগান্তি। শহর-গ্রাম কোথাও ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়েছে। গ্যাস সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য প্রায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হচ্ছে। বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুৎও মিলছে না।
তাই লোডশেডিং বেড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতি হচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বড় ধরনের ক্ষতির শংকা করছেন ব্যবসায়ীরা। পত্র-পত্রিকার খবরে বলা হয়, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে না পারার বিষয়ে পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, সামিটের এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। যে কারণে সব খাতেই গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ কেটে গেলেই বন্ধ এলএনজি টার্মিনালটি চালু হবে।
সারা দেশে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো: রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, গ্যাসের অভাবে এখন ১২শ থেকে ১৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছি না। বিশেষ করে সামিটের এলএনজি টার্মিনালটি চালু না হওয়ায় সংকট প্রকট হয়েছে। তিনমাস ১০ দিন ধরে বন্ধ এফএসআরইউটি। এ ছাড়া তেলভিত্তিক অনেক কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে। ফলে লোডশেডিং বেড়েছে। গরমের কারণে গ্রাহকদের কষ্ট হচ্ছে।
তিনি বলেন, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চ চাহিদার সময় উৎপাদন বাড়াতে। মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে না পারায় পাঁচ ছয় দিন সীমিত আকারে গ্যাস সরবরাহ করা হবে। স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির আগ পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। পিডিবির ৯ সেপ্টেম্বরে দৈনিক উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ৯৩৫ মেগাওয়াট।
এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৭ মেগাওয়াট। আর লোডশেডিং করা হয়েছে ১ হাজার ৭৬৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে বিভাগ ভিত্তিক সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে ময়মনসিংহে ২৫৭ মেগাওয়াট। এ ছাড়া ঢাকায় ২২৫ মেগাওয়াট, রাজশাহীতে ১৪৭ মেগাওয়াট, কুমিল্লায় ২১৭ মেগাওয়াট, সিলেট ১০৫ মেগাওয়াট এবং রংপুরে ১২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হয়েছে। জ্বালানি (গ্যাস ও তেল) সংকটের কারণে চার হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি কমেছে। ত্রিপুরা থেকে ঘন্টায় ১৬০ মেগাওয়াট স্থানে ৬০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ভেড়ামারা দিয়ে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমার কথা থাকলেও মিলছে ৮৮০ মেগাওয়াট। আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেও ৪০০ মেগাওয়াট কম আসছে। মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩ হাজার ৫৯৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ আছে।
জ্বালানি সংকটে দেশে ৬ হাজার ২৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। বিদ্যুতে প্রতিদিন গড়ে ৮৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেওয়া হচ্ছে, যা এপ্রিলে ছিল ১৩৫ কোটি ঘনফুট। সামিটের এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় গ্যাসের সরবরাহ কমেছে।
লোডশেডিং পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে লোডশেডিংয়ের প্রভাব বিবেচনায় রেখে করণীয় কী কিংবা এই সংকটকে কীভাবে দ্রুত নিরসন করা যায় সেই পথ খুঁজতে হবে। মনে রাখা দরকার, লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়ে সর্বত্রই। আমরা আশা করি, এই প্রচন্ড দাবদাহে জনজীবনে একটু স্বস্তি ফিরিয়ে দিতে সংশ্লিষ্টরা লোডশেডিংয়ের মাত্রা কমিয়ে আনতে খুব শিগগিরই সব ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তৎপর হবেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।