ভিডিও

পাহাড় ধসে প্রাণহানি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৫:৪৯ বিকাল
আপডেট: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ১২:০৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

কক্সবাজার জেলায় ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, অতিবর্ষণে পাহাড় ধস ও পাহাড়ি ঢলে মৃত্যুর মিছিল বেড়েই চলছে। তথ্য মতে, ভাদ্রের শেষ সময়ে কক্সবাজারে ২৪ ঘন্টায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে, যা দুই দশকের মধ্যে দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এই অতি ভারী বৃষ্টির মধ্যে পাহাড় ধস কেড়েছে ছয়জনের প্রাণ। ডুবেছে পর্যটন নগরীর হোটেল-মোটেল, পানি বন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় একশ গ্রাম।

প্রসঙ্গত আমরা বলতে চাই, এর আগে পত্র-পত্রিকায় এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে যে নির্বিচারে পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন এবং বন-জঙ্গল ও গাছপালা উজাড় করার কারণেই চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘন ঘন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। পাহাড়ের গায়ে জন্মানো বন জঙ্গল ও গাছপালা এর অভ্যন্তরীণ বন্ধন মজবুত রাখে। কিন্তু পাহাড় কাটার কারণে সেই বন্ধন দুর্বল হয়ে যায়। আর এসব কারণে পাহাড়ে ধস নামে বলেও আলোচনায় এসেছে। ফলশ্রুতিতে একের পর এক প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ।

আবহাওয়া বিভাগ বলছে কক্সবাজারে বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার হয়েছে। এর আগে ২০০১ সালের ১৪ জুন সর্বোচ্চ ৫৯০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল চট্টগ্রামের সন্দীপে। সেই হিসাবে দুই দশকের মধ্যে কক্সবাজারে গত শুক্রবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে। টানা বর্ষণে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কক্সবাজার সদর উপজেলা এবং উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসের ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

এর মধ্যে সদর উপজেলায় ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকায় পাহাড় ধসে মারা গেছে একই পরিবারের তিনজন। আর উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসেও একই পরিবারের তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন। পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাজ চলছে।

পাহাড় ধসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বলতে চাই, বৃষ্টি হলে পাহাড় ধস হবে এটা কোনো স্বাভাবিক বিষয় নয়, আর মানুষের প্রাণহানি তো নয়ই। কারণ এটা মনে রাখতে হবে যে, বছরের পর বছর ধরে নির্বিচারে গাছ কেটে পাহাড়কে ঝুঁকিপূর্ণ হবে যে, তোলা হয়েছে। পাহাড় কেটেও সমতল বানানো হয়েছে। গাছ না থাকায় মাটির কাঠামো দুর্বল হবে এটাই স্বাভাবিক।

যার ফলে বৃষ্টি হলেই নামছে ধস এমন বিষয়ও আলোচনায় এসেছে বিভিন্ন সময়ে। এটাও আমলে নেওয়া জরুরি, স্থানীয় সাধারণ মানুষ ছাড়াও প্রভাবশালী মহলসহ বিভিন্ন সংস্থার বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়েই পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, এ ছাড়া নানা ধরনের অভিযোগ উঠলেও চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলাগুলোয় পাহাড় কাটা, অবৈধ স্থাপনা ও বসতি নির্মাণ বন্ধ হয়নি এমনটিও বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে -যা অত্যন্ত উদ্বেগের।

আমরা মনে করি, এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, কিছু মানুষের অবিবেচনা প্রসূত কর্মকান্ডের ফলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটছে। ভয়াবহ স্মৃতির কথা কি কখনও ভোলা যায়। ২০০৭ সালের ১১ জুন চট্টগ্রামের সাতটি এলাকায় পাহাড় ধসে মারা যান ১২৭ জন। গত দেড় বছরে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে প্রায় চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তবু এই মৃত্যু মিছিল থামাতে প্রশাসনের চোখে পড়ার মতো কোনো উদ্যোগ নেই।

বাংলাদেশের পাহাড়গুলোয় কোনো কঠিন শিলা নেই। তাই বৃষ্টির কারণে এ ধরনের মাটি পানি শুষে ফুলতে থাকে। কঠিন শিলা না থাকায় মাটি নরম ও পিচ্ছিল হয়ে যায়। তা ছাড়া যারা পাহাড়ে কিংবা এর পাদদেশে থাকেন, তারা ঘর নির্মাণের জন্য পাহাড়ের সবচেয়ে শক্ত মাটির স্তরও কেটে ফেলেন এবং এতেও পাহাড় ধসের শংকা প্রকট হয়ে ওঠে। নির্বিচারে চলছে পাহাড় কাটার মতো সর্বনাশা কর্মকান্ড। অথচ আইন অনুযায়ী দেশে পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ।

পাহাড় কাটার ফলে কেবল দুর্ঘটনাই যে ঘটে তাই না, প্রাকৃতিক পরিবেশও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। আর শুধু যে পাহাড় কাটা হচ্ছে তাও তো নয়, পাহাড়ের প্রকৃতিও বদলে দেওয়া হচ্ছে। মানুষ ও প্রকৃতির বৈরী চেহারাগুলো দায়িত্বশীলদের চেনা থাকা সত্ত্বেও কেন প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয় না-এসবই খুব বিস্ময়কর এবং যুগপৎ প্রশ্নবোধক।

পাহাড়ে ফের মর্মন্তুদ ঘটনায় আমরা শোকাহত। পাহাড় ধসে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এই ঝুঁকি থেকে মুুিক্তর সব পথ অবিলম্বে নিশ্চিত করা হোক।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS