ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রভাব পড়েছিল রেমিট্যান্স ও বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভে। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করেছিলেন প্রবাসীরা। সার্বিক পরিস্থিতিতে কমেছিল রেমিট্যান্স প্রবাহ। তবে আন্দোলন সফল হওয়ার পর প্রবাসীরা আবার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সেই সুবাদে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২০৭ কোটি মার্কিন ডলার।
এ ছাড়া চলতি মাসের শুরুতে কমলেও শেষের দিকে কিছুটা বেড়েছে রিজার্ভ। ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। গত মাসের ধারাবাহিকতা রয়েছে চলতি মাসে। আগস্টের চেয়ে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাড়তে পারে চলতি মাস সেপ্টেম্বরে।
এ মাসের প্রথম সাতদিনেই এসেছে ৫৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ৭ হাজার ১৪ কোটি টাকা। গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ২০৭ কোটি ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের একই সময় রেমিট্যান্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ডলার। সে হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ৩১ শতাংশ।
গত জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথ্য বলছে, গত অর্থ বছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বরে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ, নভেম্বরে ১৯৩ কোটি, ডিসেম্বরে ১৯৯ কোটি ২২ লাখ, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ১১ কোটি ৩১ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ, মার্চ মাসে ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ, এপ্রিলে এসেছে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ, মে মাসে এসেছে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ এবং জুনে আসে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার।
এদিকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধিতে বাড়ছে রিজার্ভ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএস-৬ অনুযায়ী ২৮ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৬ কোটি বা ২০ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন ডলার, যা জুলাইয়ের একই সময়ে ছিল ২০ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ সামান্য বেড়েছে রিজার্ভ। তবে বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব আছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, নিট বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নেমেছে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত জুলাইয়ে কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে আন্দোলন, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাবে না বলে হুমকি দেন প্রবাসীরা। যার প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয়ে। তবে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর এ ধারা পরিবর্তন হয়। এখন বৈধ পথে রেমিট্যান্স বাড়ছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। মনে রাখতে হবে, দেশের অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
এ ছাড়া রেমিট্যান্স বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে যা ইতিবাচক। বিশেষ করে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে বিভিন্ন ভাবে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। ফলে প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রম বাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা জরুরি।
জীবন ও জীবিকার কারণে যারা বিদেশ পাড়ি দিতে চান, তাদের বিদেশ গমনও খুব সুখকর হয় না। অথচ দেশে জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক গতিকে সচল রাখতে এদের অবদান অনস্বীকার্য। এ ছাড়া আমাদের দেশের অধিক জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে পরিণত করতে হলে জনশক্তি রফতানি একটি অন্যতম মাধ্যম।
যত বেশি সংখ্যক দক্ষ শ্রমিক রফতানি করা সম্ভব হবে এবং বিদেশে তাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে, রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি অব্যাহত থেকে তা জাতীয় অর্থনীতিকে আরো সমৃদ্ধ করবে। প্রবাস গমন বা যারা ইতিমধ্যে প্রবাসে বসবাস করছেন, তাদের সার্বিক সহযোগিতায় সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় আরো বেশি মনোযোগী হবে- এটা আমাদের স্বাভাবিক প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।