ভিডিও

পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনুন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ১০:৪৮ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৪, ১০:৪৮ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

দুর্নীতি ও অর্থপাচার সংক্রান্ত উদ্বেগ নানা সময়ই আলোচনায় এসেছে যা আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। বিদেশে অর্থ পাচারসহ সার্বিকভাবে দুর্নীতি ও অর্থপাচার সংক্রান্ত অপরাধ আমলে নেওয়ার বিকল্পও নেই। ফলে এ সংক্রান্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা যেমন আশা ব্যঞ্জক, তেমনি উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরি বলেই আমরা মনে করি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। পত্র-পত্রিকার তথ্য মতে, রপ্তানি বাণিজ্যের আড়ালে ৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি অর্থে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান সহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আল-জাজিরার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ভূমিমন্ত্রী ৩৬০টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন। যার মূল্য ২৫০ মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশি অর্থে দাঁড়ায় প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। দেশের বাইরে সব মিলিয়ে তিনি ৫০০ এর বেশি বাড়ি কিনেছেন। সেগুলোর মূল্য প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে তদন্ত শুরু করেছে। এত টাকা কীভাবে কাদের সহায়তায় তিনি দেশের বাইরে পাচার করলেন তা অনুসন্ধান করতে হবে। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে পাচারকৃত দেশের টাকা।

দেশে আইনের শাসনের ঘাটতি ছিল বলে দুর্নীতিবাজদের কিছু হয়নি বলে মন্তব্য করেছিলেন অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। তিনি বলেছিলেন, দেশে দুর্নীতি দমন করতে চাইলে বড় দুর্নীতিবাজদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত দেখাতে হবে। মনে রাখতে হবে, নৈতিকতা বহির্ভূত সব কাজই দুর্নীতি। ক্ষমতার অপব্যবহার করলে সেটিকে দুর্নীতি বলা যায়।

কাজেই দুর্নীতি রাজনীতিতে থাকতে পারে, প্রশাসনে থাকতে পারে, প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারে। অর্থাৎ সর্বত্রই থাকতে পারে দুর্নীতি, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্নীতি হয় আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েস ও আন্ডার ইনভয়েসের মাধ্যমে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজেটের ক্ষেত্রে কাজের লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি পূরণ না হলেও বাজেটের টাকা সবটুকুই খরচ হয়ে যায়। এর ফলে বাজেট বাস্তবায়নেও অনেক দুর্নীতি করা হয়।

দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার কাজ যারা করবে তাদের অবশ্যই নৈতিকতা ঠিক রাখতে হবে। আর এই নৈতিকতা ঠিক না থাকাও এক ধরনের দুর্নীতি। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, রাজনীতিবিদদের ছাড়িয়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা, যারা জনগণের অর্থে সরকারের দেওয়া প্রচুর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এ দেশে ব্যবসা করেন। পাচারের তালিকায় এরপরই রয়েছেন দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তারা। তাদের রুখতে না পারলে মুদ্রা পাচারও রোধ করা যাবে না।

অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র একমাস হলো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। তাদের সামনে এখন পতিত ফ্যাসিবাদ সরকারের রেখে যাওয়া দুর্নীতি ও অপশাসনের পাহাড়সম সমস্যা। স্বীকার করতেই হবে পতিত ফ্যাসিবাদি হাসিনা সরকারের আমলে দেশ থেকে যে বিপুল অর্থ পাচার হয়েছে তা কোনো আমলেই হয়নি। অর্থ পাচারের এ ক্ষতি দেশের অর্থনীতির জন্য বিসংবাদ সৃষ্টি করছে।

অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই এ দিকটি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেবে। অর্থপাচার ও দুর্নীতি প্রতিরোধে অন্তর্বর্তী সরকারকে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এতে কোনো পক্ষকে ছাড় নয়, বরং প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। পাচার হওয়া টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে অবশ্যই; কিন্তু তা পাচারকারীদের দায়মুক্তি দিয়ে নয়।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS