প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সমর্থনের কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বৈঠক এক বিরল ঘটনা। তবে তা সম্ভব হয়েছে নোবেলজয়ী বিশ্বনন্দিত ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট যেদিন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তৃতা দেন, ওই দিন বিকালে তিনি অধিবেশনে আগত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে সংবর্ধনা আয়োজন করেন। এদিকে, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তারিও গুতেরেসের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, যুব সমাজের জীবন উৎসর্গ এবং অদম্য নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটেছে। একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ার লক্ষ্যে তারা জীবন দিয়েছে। তরুণদের এই স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিদেশি বন্ধুদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
নিউইয়র্ক সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি বন্ধুদের উদ্দেশে বলেন, তরুণদের আত্মত্যাগ আমাদের সামনে বড় সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। আমরা এই সুযোগ হারাতে চাইনা। বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল পরিবর্তনের মাধ্যমে তরুণরা নতুন বাংলাদেশ গড়তে চায়।
এটি বাস্তবায়নে আপনাদের সবার সমর্থন প্রয়োজন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদপ্রাপ্তির ৫০তম বছর উদযাপন উপলক্ষে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ লাভ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ওয়াশিংটন ও ঢাকার মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এটি অভিন্ন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং দুই দেশের জনগণের সম্পর্কের গভীরে প্রোথিত।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে সাম্প্রতিক নিয়োগে ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক সফররত প্রধান উপদেষ্টা ব্যস্ত সময় পার করেছেন। তিনি যুুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি আরো কয়েকটি বৈঠক ও অনুষ্ঠানে অংশ নেন। গতকাল সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন তিনি।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার দেখা হওয়ার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল এ কারণেই যে গত ৩০ বছরে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে এমন বৈঠক কখনো হয়নি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাধারণত স্বল্প সময়ের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে নিউইয়র্ক যান এবং কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন না।
খুব স্বাভাবিকভাবেই বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছিলেন, এটি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থনের প্রতিফলন। আমরা আশা করি, বাইডেন-ইউনূস বৈঠক থেকে বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা বয়ে এনেছে।
বাংলাদেশের সংস্কার কাজে যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করবে বলে দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। আমরা এ অর্জন ধরে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নয়নের অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।