ভিডিও রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

ক্ষমতার দৌড়ে বিবেকের পতন

ক্ষমতার দৌড়ে বিবেকের পতন, ছবি : দৈনিক করতোয়া

ক্ষমতার সুব্যবহার বা নেতৃত্ব যেমন একটি সমাজ ও দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারে। তেমনি ক্ষমতার অপব্যবহার পারে সমাজ ও দেশকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে। ক্ষমতা, লোভ - লালসা, অহংকার, দাম্ভিকতা এসব মানুষকে করে তোলে বিবেকহীন। বিবেকহীন মানুষকে তুলনা করা হয় পশুর সাথে। একটি পশু যেমন ঠিক - ভুল, ভালো - খারাপ কোন কিছু বুঝে উঠতে পারে না।

ঠিক তেমনি একজন লোভী মানুষও ঠিক - ভুল, ন্যায় - অন্যায় বুঝে উঠতে পারে না। মহান সৃষ্টিকর্তা সকল মানুষের মাঝে বিবেককে করে দিয়েছেন উন্মুক্ত। কেউ চাইলেই এই বিবেককে ব্যবহার করে নিজেকে বসাতে পারেন শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আবার অন্যদিকে এই বিবেককেই ব্যবহার করে নিজেকে নামাতে পারেন নিকৃষ্টতম পর্যায়ে।

দেশের এই ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে সকল স্তরের মানুষের এই বিবেকহীনতার পরিচয় দেওয়া মানানসই নয়। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কেউ পিছিয়ে নেই এই অর্থ ও ক্ষমতা লোভের দৌড়ে। কেন এই বিবেকহীনতা? কী হতে পারে এর পরিণতি? এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার অবকাশ রয়েছে। তবে সাধারণ অর্থে আমরা যা বুঝি, এই বিবেকহীনতার মূল কারণ হলো অর্থ ও ক্ষমতার লোভ।

অর্থ ও ক্ষমতার লোভেই সবাই তাদের বিবেক বিক্রি করছেন কেউ হাজার কোটি টাকার জন্য কেউবা মাত্র হাজার টাকার জন্য আবার কেউ ক্ষমতা লাভের জন্য। আর এর পরিণতি ডেকে আনতে পারে দেশ ও জাতির ধ্বংস। যাদের জাতি গঠনের কারিগর বলা হয় তারাও পিছিয়ে নেই। তারাও বিবেক বিসর্জন দিয়ে বিভিন্নভাবে দলবাজিতে ব্যস্ত থাকে।

যারা মানুষকে বাঁচাতে সাহায্য করেন তারাও ব্যস্ত দলবাজিতে। আর এই দলবাজি করার মূল কারণ হলো বিশেষ সুযোগ সুবিধা। যে রাজনীতিবিদদের জনকল্যাণে ব্যস্ত থাকার কথা তারা ব্যস্ত থাকে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টায়। কেউ ক্ষমতার জেরে অর্থ উপার্জন করে আবার কেউ অর্থ ব্যয় করে ক্ষমতা অর্জন করে। এ যেন এক অন্যরকম খেলা।

এ দৌড়ে পিছিয়ে নেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও, সামান্য কিছু অর্থের লোভে নানাভাবে ঠকায় ক্রেতাদের। অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য তৈরি করা হয় নানা সিন্ডিকেট। যার ফলে বেড়ে যায় দ্রব্যমূল্য। ফলস্বরূপ ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ জনগণ ও খেটে খাওয়া মানুষ। বাকি পেশার কথা না হয় বাদই দিলাম। এই ক্ষমতা ও অর্থ লোভ যে শুধু মানুষের কর্মজীবনে প্রভাব ফেলে তা নয়।

মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও নানাভাবে প্রভাব ফেলে। ব্যক্তি জীবনে অর্থ ও ক্ষমতার লোভে অনেকেই জড়িয়ে পড়েন নানা দ্বন্দ্বে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রায় সময়ই গুম, খুন ইত্যাদি নানা ধরনের খবর শোনা বা দেখা যায়। যার অধিকাংশ ঘটনার জন্য দায়ী ক্ষমতা লোভ বা অর্থ সংক্রান্ত বিষয়।

আরও পড়ুন

সমাজে এমন অনেক মানুষই রয়েছেন যারা ক্ষমতা অর্জনের পূর্বে যেমন থাকেন ক্ষমতা অর্জনের পর হয়ে যান তার বিপরীত। আর এই বিপরীতমুখী হওয়ার মূল কারণ ক্ষমতা ধরে রাখার লোভ। ক্ষমতার লোভ মানুষকে এতটাই নিচে নামাতে পারে যে ক্ষমতাধারীরা নিজেদের মনিব আর বাকি সবাইকে মনে করেন দাস। ক্ষমতা অর্জনের পর বিষয়টা এমন দাঁড়ায় "যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ"।

একটি মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ না থাকলে তার দ্বারা কোন ভাল কাজ করা সম্ভব নয়। আর এই বিবেকের বিকলাঙ্গতা সমাজ, দেশ সব কিছুর জন্যই টেনে আনে ধ্বংস। বিবেক বিকলাঙ্গতা ঠিক করার জন্য না আছে চিকিৎসা আর না আছে কোন ঔষধ। ধর্মীয় অনুশীলন, পারিবারিক শিক্ষা, মনুষ্যত্ববোধই পারে বিবেক বিকলাঙ্গতা থেকে একটি মানুষকে বের করে আনতে।

এই দেশটি আমাদের। আমাদের উচিত ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করে দেশ ও জাতিকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। বিবেক বিসর্জন দিয়ে দেশের সম্পদ আত্মসাৎ করে বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া আমাদের কাম্য নয়।


লেখক : শিক্ষার্থী ও ফিচার লেখক
সমাজকর্ম বিভাগ
রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী

01973-320205

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে হামলা-হুমকি-র‌্যাগিংসহ বিভিন্ন অপরাধে রাবির ৩৩ শিক্ষার্থীকে শাস্তি

ঘন কুয়াশায় এক্সপ্রেসওয়েতে ৭ যানবাহনের সংঘর্ষ, আহত ৫

আইনজীবী আলিফ হত্যা : তদন্ত কমিটির সব সদস্যের পদত্যাগ 

আজও খুব অস্বাস্থ্যকর ঢাকার বাতাস

বাংলাদেশের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত 

সমালোচনার পর কমলো বিপিএল মিউজিক ফেস্টের টিকিটমূল্য