ভিডিও

ডেঙ্গু রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নিন

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ১১:১০ রাত
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪, ১১:১০ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। যতই দিন যাচ্ছে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। খবরে প্রকাশ, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও সাতজনের মৃত্যু হয়েছে, যা চলতি বছরে এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে চলতি মাসের ২৮ দিনে ডেঙ্গুতে ৬৭ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে সাত জনই শিশু। চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ১৫০ জন। গত শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এটা সত্য মশাবাহিত রোগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে ডেঙ্গু। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বের ৭ লাখ ২৫ হাজার মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় মশা। আর এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে মারা যান ৩৬ হাজার মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এক সতর্ক বার্তায় জানিয়েছে, বিশ্বের অর্ধেক মানুষই রয়েছেন ডেঙ্গু ঝুঁকিতে। তা ছাড়া বিশ্বের কোনো দেশে জরুরি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডেঙ্গু।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে পৃথিবীর প্রায় ১৩০টি দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটেছিল। এর মধ্যে ৭টি দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ তীব্র হয়েছে -যার মধ্যে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ছাড়াও ডেঙ্গুর প্রকোপ তীব্র হওয়া দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল, বুরকিনা ফাসো, ফিজি, পাকিস্তান, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনাম।

আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৭ হাজার ২৮৪ জন রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ১০২ জন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর মৃত্যুহার বেড়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। গত বছর যা ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু, স্থূলকায় ব্যক্তি, অন্ত:সত্ত্বা নারী ডেঙ্গুর সংক্রমণের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্র, কিডনি, ফুসফুস ও যকৃতের সমস্যা আছে তারাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই এ ধরনের ব্যক্তিরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাওয়া দরকার যাতে তাদের অবস্থা গুরুতর না হয়। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত শহর ও আঞ্চলিক উভয় পর্যায়ে ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, কীটতত্ত্ববিদ ও চিকিৎসকরা বলছেন, টানা বৃষ্টি হলে বাড়ি, বাড়ির আঙ্গিনা অথবা বিভিন্ন জায়গায় আনাচে-কানাচে পড়ে থাকা পাত্রে পানি জমা হবে এবং সেই পানিতে এডিস মশা ডিম পেড়ে তার বংশ বিস্তার ঘটাবে। কোনো একটি জায়গায় এডিস মশার ঘনত্বের ইনডেক্স বা ব্রোটো ইনডেক্স যখন ২০ অতিক্রম করবে; তখনই সেই এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকবে।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অযৌক্তিক ভীতিতে আতঙ্কিত না হয়ে জ্বর যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে চেষ্টা করতে হবে। পরিমিত পানি পানে উদ্যোগী হতে হবে। গুরুতর অসুস্থ বোধ হলে হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে। এডিস মশা বন জঙ্গলে নয় মানুষের বাসগৃহেই আস্তানা গাড়ে। এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক হলে এ মশার আগ্রাসন একেবারে থামিয়ে দেওয়াও সম্ভব।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ হতে জনগণকেও আশ্বস্তও করা হয়েছে। কিন্তু মশা নিধন কার্যক্রম সহ তাদের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ যে ফলপ্রসূ হয়নি, রাজধানীর ডেঙ্গু পরিস্থিতিই তার অকাট্য প্রমাণ হিসাবে উত্থাপিত হতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সিটি করপোরেশনের কাজের সমন্বয়হীনতা এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করেছেন।

প্রশ্ন আছে মশা নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও। ডেঙ্গুর কারণ ও প্রতিকারের বিষয়টি এতটাই সুবিদিত যে, এই ব্যাপারে বিশদ বলার অবকাশ নেই বললেই চলে। মূল কাজটি হলো, ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা নির্মূল করতে হবে এবং কাজটি করতে হবে সম্মিলিতভাবে। কারণ এডিস মশার অভয়াশ্রম হলো আবাসিক ভবন ও অফিস-আদালতে নানা স্থানে জমে থাকা স্বচ্ছ পানি।

অতএব, এই মশা নির্মূলে জনসম্পৃক্ততা ও জনসচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। ডেঙ্গু জ্বর থেকে রেহাই পেতে হলে এডিস মশার বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করতে হবে। আঘাত হানতে হবে এডিসের আস্তানায়। এ মশার প্রজনন থামিয়ে দিতে হবে। সেদিকেই সবাই নজর দেবেন এমনটিই কাম্য।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS