ভিডিও

বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ

মোহাম্মদ মোস্তাকিম হোসাইন

প্রকাশিত: অক্টোবর ০৫, ২০২৪, ০৬:৪৫ বিকাল
আপডেট: অক্টোবর ০৫, ২০২৪, ০৬:৪৫ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবীর কাছে প্রথম যে ওহিটি নাযিল করেছেন তা হচ্ছে শিক্ষা অর্থাৎ ইকরা বিসমি রব্বিকাল লাজি খালাক। পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। তাই শিক্ষার প্রতি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এটিই হচ্ছে মহান আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশনা তাই বলতে হয়, ৯৭ শতাংশ শিক্ষকদের বঞ্চিত করে আর যাই হোক দেশের সার্বিক উন্নয়ন অসম্ভব।

কারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ৯৭ শতাংশ শিক্ষা ব্যবস্থা এমপিও (মান্থলি পে অর্ডার) নির্ভর। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত একই সিলেবাসে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান চললেও শিক্ষকদের বেতন-ভাতায় রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য।

অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে তিন স্তরের পরীক্ষার মাধ্যমে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর একজন প্রার্থী বেসরকারি শিক্ষকতায় আসেন। এদের মধ্যে অনেক এমফিল পিএইচডি ডিগ্রি ধারিরাও রয়েছে। অথচ প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয়ার সময় এবং তৎপরবর্তীকালে তাকে বেতনভুক্ত (এমপিও) হওয়ার জন্য পোহাতে হয় নানা ঝামেলা।

এসব শেষ করে যখন তিনি বেতনভুক্ত হন তখন সহকারী শিক্ষক হিসেবে তার বেসিক বেতন হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা, সঙ্গে ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া, ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও ১ হাজার টাকা স্পেশাল বেনিফিট। সবমিলিয়ে ১৫ হাজার টাকা। সেখান থেকে আবার বেসিকের ১০ শতাংশ অবসর-কল্যাণ ফান্ডের জন্য কেটে নেয়া হয়। অর্থাৎ সবকিছু কাটছাঁট করার পর তিনি পান ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা। এই টাকা দিয়ে সংসার পরিচালনা করা অত্যন্ত কষ্টকর।

শুনেছি শহরের অনেক কাজের বুয়াকে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। অন্যদিকে একজন বেসরকারি প্রভাষক সবকিছু কাটছাঁট করার পর পান ২২ হাজার ৪০০ টাকা। যা দিয়ে একজন শিক্ষকের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে উঠে। ফলে তাকে শিক্ষকতার পাশাপাশি অন্য সোর্স থেকেও আয় করতে হয়, অবশ্যই সবার বেলায় তেমন সুযোগ থাকে না।

এতে শিক্ষকতায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়। এছাড়াও দুই ঈদে সহকারী শিক্ষকরা উৎসব ভাতা পান মাত্র ৩ হাজার ১২৫ টাকা এবং প্রভাষকরা পান ৫ হাজার ৫০০ টাকা। যা দিয়ে তাদের পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ থাকে না।

অথচ সরকারি স্কুলে বা সমগ্রেডের যেকোনো চাকরিতে বেসিকের পাশাপাশি ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাসা ভাড়া এবং শতভাগ উৎসব ভাতা দেয়া হয়। ফলে মেধাবীরা বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে আসতে আগ্রহী হন না। যার প্রমাণ মিলে বিগত গণবিজ্ঞপ্তি গুলোতে। যেখানে শূন্যপদের বিপরীতে ৩০ শতাংশও পূরণ হয়নি। এতে শিক্ষক সংকটে শিক্ষা সেক্টর দিনদিন পিছিয়ে যাচ্ছে।

এছাড়া বর্তমানে সরকারি স্কুল-কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকা। অথচ সেখানে বেসরকারি স্কুল-কলেজে নেয়া হচ্ছে ২৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের বাজারে লোকজন তাদের ছেলে-মেয়েদের ভালো স্কুল-কলেজে পড়াতে হিমশিম খাচ্ছেন। গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভালো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চাচ্ছেনা অর্থনৈতিক কারণে।

আমরা জানি গত বছর জুলাই মাসে বেসরকারি শিক্ষকরা শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের জন্য টানা ২২ দিন আন্দোলনে বিগত সরকার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি শিক্ষকদের বরং শিক্ষকদের ছুটি কাট ছাট করে। তবে ডক্টর ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর শিক্ষকরা আবারও আশায় বুক বেঁধেছে। ইতিমধ্যে শিক্ষকদের বেতন উত্তোলনে বিড়ম্বনা দূরীকরণের লক্ষ্যে ই এফটির মাধ্যমে বেতন প্রদানের কথা শোনা যাচ্ছে।

একই দেশে একই শিক্ষা ব্যবস্থায় একই সিলেবাসে পড়িয়ে একই সময় কর্ম ঘন্টা অতিবাহিত করেও বেসরকারি শিক্ষকেরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। যা চরম বৈষম্য বলে জাতি মনে করে। সবচেয়ে দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আজও অনেক নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বিনা বেতনে তাদের কর্ম করে যাচ্ছেন ,ওই প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী পাশ করে উচ্চ শিক্ষা সহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি চাকরিতে যোগদান করছে কিন্তু ওই সমস্ত নন-এমপিও শিক্ষকেরা বেতন বোনাস এমনকি অভিজ্ঞতা থেকেও বঞ্চিত।

তাদের এই অভিজ্ঞতারও কোন মূল্য নাই সরকারের কাছে যা চরম বৈষম্যের প্রতিফলন বলে আমরা মনে করি। অথচ ঐ শিক্ষকেরা সরকারের বিধি নিয়ম মেনে বিজ্ঞপ্তি সহ ডিজির প্রতিনিধির মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে। যারা শিক্ষাগত যোগ্যতা ও মেধার সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়ে নিয়োগ পেয়ে যোগদান করেছে, তাদের তো কোন দোষ নেই।

কেন তাদের কর্ম ঘন্টা সময় এবং মেধার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে জাতির কাছে এটি আমাদের জিজ্ঞাসা। সবাই শুধু নিজেদের চিন্তা করে নন এমপিও শিক্ষকদের কথা কেউ বলছে না ,বিষয়টা আমলে নেয়া দরকার। আমরা মনে করি বিধি মোতাবেক নিয়োগ প্রাপ্ত সকল নন এমপিও শিক্ষকদের কে এমপিও ভুক্ত করা হোক অথবা তাদেরকে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা হোক।

আজকে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট আবেদন করতে চাই যে দেশের সকল  নিয়োগপ্রাপ্ত নন এমপিও এবং এমপিও ভুক্ত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে জাতিকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করুন।  ক্ষুধার্ত  শিক্ষক ও শিক্ষক পরিবারের অভিশাপ না নিয়ে ,দোয়া ও অভিনন্দন গ্রহণ করুন।

মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাআলা মানুষকে ক্ষমতা দেন পরীক্ষার জন্য। তাই ক্ষমতার সঠিক সেবা ও ব্যবহার জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতিমধ্যে অনেক কিছু সংস্কার মূলক কর্মকান্ড করেছে যা প্রশংসার দাবি রাখে। সেই সাথে শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের হস্ত প্রসারিত করবেন বলে শিক্ষক সমাজ বুক বেঁধে আছে।


লেখক : ইসলামি কথা সাহিত্যিক ও শিক্ষক

most akim bogra@gmail.com 

01712-777058



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS