ভিডিও

বজ্রপাতে প্রাণহানি বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি

প্রকাশিত: অক্টোবর ০৫, ২০২৪, ০৭:৩১ বিকাল
আপডেট: অক্টোবর ০৫, ২০২৪, ০৭:৩১ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত প্রবণ এলাকা। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর সারা বিশ্বে যত মানুষ বজ্রপাতে প্রাণ হারায় তার প্রতি চারজনের একজন বাংলাদেশের। দেশে প্রতি বছর দুই থেকে তিনশজন প্রাণ হারাচ্ছে বজ্রপাতে।

গত মে মাসে বজ্রপাতে একদিনে দেশের চার জেলায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। অনুমান করা হয়, আবহাওয়ার অনভিপ্রেত পরিবর্তন বায়ু মন্ডলের উষ্ণতা যেমন বাড়াচ্ছে তেমনি বাড়িয়ে চলেছে টর্নেডো, ঝড় ও প্লাবনের মতো দুর্যোগ। বজ্রপাত বৃদ্ধির পেছনেও তা অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করা হয়। গাছপালা কমে যাওয়ায় দেশের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। বাতাসে বাড়ছে জলীয় বাষ্পের পরিমাণও।

দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আস আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে সৃষ্টি হচ্ছে বজ্রপাত। অতীতে যেসব অঞ্চলে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেনি ওইসব অঞ্চলেও বজ্রপাত হচ্ছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে। সম্প্রতি তিন জেলায় বজ্রপাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা ও বালিয়াডাঙ্গীতে বজ্রপাতে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন আরও আটজন। কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুরে বজ্রপাতে দুজন নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বজ্রপাতের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের সম্পর্ক রয়েছে।

সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ সময় অসহনীয় গরমে বজ্রপাতের আশংকা ১২শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বাতাসে সিসার পরিমাণ বাড়া, অধিক ধাতব পদার্থের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের অতি ব্যবহার, মোবাইল ফোনের টাওয়ারের সংখ্যার আধিক্য, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের  সংখ্যা কমে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট ও নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ছে।

দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্তই কেবল নয়, অন্য মাসেও বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক এ পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি। বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকায় ২০১৬ সালে সরকার বজ্রপাতকে ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ’ হিসেবে ঘোষণা করে।

এরপর থেকে বজ্রপাত রোধে নেওয়া হয় বিশেষ পরিকল্পনা ও সতর্কীকরণ কর্মসূচি। কিন্তু মৃত্যুর মিছিল তাতে থামানো যায়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাতে মৃত্যুর মিছিল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গ্লোবাল ক্লাইমেট মডেলিং বিশ্লেষণ করে একই ধারণা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বজ্রপাত গবেষক। বস্তুত এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, বায়ুমন্ডলে ধাতব উপাদান বেড়ে গেলে তা বজ্রপাতের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

বজ্রপাতের মাত্রা বৃদ্ধির কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও গবেষণা সমীক্ষার বিকল্প নেই। এটা ঠিক, বিলম্বে বজ্রপাত সরকারি পর্যায়ে দুর্যোগ হিসেবেই চিহ্নিত হয়েছে। কিন্তু উৎকন্ঠা যতখানি, তা নিরসনে উদ্যোগ ততখানি চোখে পড়েনি। বিগত সরকারের সময়ে আমরা গভীর হতাশার সঙ্গে দেখছি বজ্রপাতের আগাম সতর্কতা দিতে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করে কেনা লাইটেনিং সেন্সর কোনো কাজে আসেনি।

নিছক ‘কারিগরি জনবল’ না থাকার অজুহাতে জনগুরুত্বপূর্ণ এই প্রযুক্তির এমন পরিণতি কাম্য হতে পারে না। 
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্প খুব বেশি কার্যকর হবে না। কারণ এসব যন্ত্রের কাভারেজ খুবই কম। যদি কাভারেজ কয়েক কিলোমিটার বা কয়েকশ মিটারও হয়। তাহলে এটি বজ্রাঘাত থেকে রক্ষায় কার্যকর হবে। আর তা না হলে এটি থেকে সুফল আসে না।

বজ্রপাত প্রতিরোধে জনসাধারণের করণীয় সম্পর্কে মন্ত্রণালয় যে নির্দেশনা দেওয়া আছে তা সবাইকে মানতে হবে। আগের দিনে বাসাবাড়িতে আর্থিং থাকত। সেটি স্থাপন এখন কমে গেছে। প্রতিটি বাড়িতে আর্থিং ব্যবস্থা যাতে আবার ব্যাপকভাবে করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেন এ দুর্যোগ বাড়ছে তা নির্ণয়ের উদ্যোগ থাকা উচিত। আবহাওয়ার বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রতিরোধেও থাকতে হবে সতর্কতা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS