রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনীয়তা
২০১৭ সালের আগস্ট মাসে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণসহ বর্বর নির্যাতনের মুখে দলে দলে রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসে। এই জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষের ভার বহন করতে গিয়ে বাংলাদেশ হিমশিম খাচ্ছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছে।
একটি জেলার একটি অংশে ১০ লাখ অতিরিক্ত মানুষ আশ্রয় নেওয়ায় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ওদিকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে নানা ধরনের দলবাজি, কোন্দল জন্ম নিয়েছে। স্বাভাবিক আয়-রোজগারের সুযোগ কম থাকায় রোহিঙ্গারা মাদক, অস্ত্র, চোরাচালানসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডে যুক্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা ও বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে এখন ১১ লাখের বেশি অবস্থান করছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে অন্তত ৭ লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে নিপীড়নের শিকার হয়ে অন্তত ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসে।
পরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর মায়ানমারের রাজধানী নেপিদোয় তৎকালীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর দফতরের মন্ত্রী চটিল্ট সোয়ে একটি চুক্তি সই করেন। চুক্তির এক মাসের মধ্যে ঢাকায় পররাষ্ট্র ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে ৩০ সদস্যের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়।
রোহিঙ্গাদের পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে সম্মানজনকভাবে স্বদেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে দ্ইু দেশের মধ্যে যে সমঝোতা হয়েছিল, সেটাও তৎকালীন সরকার বাস্তবায়ন করতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে প্রত্যাবাসন ইস্যুটি নিয়ে আবার কাজ শুরু হয়েছে।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আওতায় রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত কিংবা তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো যায় কিনা সে বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে। এ জন্য আগামী ডিসেম্বরে চীন, ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে নিয়ে একটি কনফারেন্স করার পরিকল্পনা করছে, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
আরও পড়ুনতবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর আগ পর্যন্ত রোহিঙ্গা শিবিরে যেন কোনো ধরনের অরাজকতা না দেখা দেয় সে জন্য আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অস্থিরতা ও মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অন্তত ৩ বিলিয়ন অতিরিক্ত আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন হয়েছে।
আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ ও বিশ্ব ব্যাংকের বার্ষিক সভায়ও এ সংকট সমাধানের পক্ষে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরবেন অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অথর্নীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা এটাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে অ্যাড্রেস করেছেন। তবে সময়টাকে আরও দীর্ঘায়িত না করে দ্রুত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে যদি রাখাইনে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারকে বোঝাতে কিংবা চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হয়, তাহলে এই জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদানের বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা থাকবে না।
মন্তব্য করুন