ভিডিও

ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৫:৪৫ বিকাল
আপডেট: অক্টোবর ১৩, ২০২৪, ০৫:৪৫ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের আমলে দেশের ব্যাংকিং খাতে রীতিমতো নৈরাজ্য চলেছে। ঋণের  নামে জনগণের আমানতের  টাকা লুটপাট করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই শত শত কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকের লোকজনের যোগসাজশে ভুয়া কাগজে, ভুয়া ঠিকানায় ঋণ গেছে, ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ শুধু বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে লুটপাটের কারণে যে ঘাটতি হয়, তা আবার সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ দিয়ে পূরণ করা হয়।

গত প্রায় ১৬ বছরে খেলাপি ঋণ নথিপত্রে যতটা বেড়েছে, তা আর্থিক খাতের ভয়ংকর এক চিত্র তুলে ধরছে। এই সময়ে শুধু ব্যাংক খাতেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। এই ঋণের বড় অংশই আদায় অযোগ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাস শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা।

ফলে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশই এখন খেলাপি হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে, তখন মোট খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ফলে দলটি টানা তিন মেয়াদ ও সাত মাস ক্ষমতায় থাকার সময় খেলাপি ঋণ যতটা বেড়েছে, তা দিয়ে ৬টি পদ্মা সেতু বা ৫টির বেশি মেট্রো রেল নির্মাণ করা যেত।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা অবশ্য মনে করেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হিসাবে অবলোপন করা ও আদালতের আদেশে স্থগিত থাকা ঋণ বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নথিপত্রে দেখা গেছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৯৯ হাজার ৯২১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের প্রায় ৮ শতাংশ।

এ ছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ৩ হাজার ২২৯ কোটি টাকা ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৫ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ছয়মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬৫ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারি মার্চ সময়ে বেড়েছে ৩৬ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি ডলারের যে ঋণ দিয়েছে, তার একটি শর্ত হচ্ছে ২০২৪ সালের মধ্যে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। তবে একেবারে উল্টোটিই ঘটেছে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ আরও বেড়েছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকেরা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে এলেও সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত জুনে যে বাজেট দিয়েছিলেন, তাতে তিনি এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নও বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের ব্যাংকিং খাত কি সেই ভূমিকা পালন করতে পেরেছে? রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংক কোনো নিয়ম নীতি না মেনেই হলমার্ক গ্রুপকে দুই হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিল। জামানত তো দূরের কথা, যত দূর জানা যায়। এসব ঋণের কোনো নথি নেই, স্বাক্ষর নেই।

এমনকি আবেদন পত্র পর্যন্ত নেই। আরেকটি বেসরকারি ব্যাংক গত কয়েক বছরে কোন গ্রাহককে কত টাকা দিয়েছে, তার সঠিক হিসাব পর্যন্ত নেই। এমন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেওয়া হয়েছে যাদের কারখানা নেই, অফিস নেই, বন্ধকি সম্পত্তি নিজের নয়, সরকারি জমি, এমনকি কবর স্থানের জমিও বন্ধক রাখা হয়েছে। নিয়মনীতি ভঙ্গ করে একটি গ্রুপকে একটি ব্যাংক মাত্র ছয় বছরে পাঁচ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা ঋণ ও ঋণ সুবিধা দিয়েছে।

অন্যদিকে প্রকৃত উদ্যোক্তারা ব্যাংকগুলোতে গিয়ে শুধুই হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে বিস্তর অভিযোগ সংবাদ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়। অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণই পান না, আবার অনেকে ঋণ পেলেও ঋণের অর্থ হাতে পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এমনকি নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী হিসেবে স্বীকৃত বড় উদ্যোক্তাদেরও ভোগান্তি কম হয় না। উপযুক্ত জামানতের নথি নিয়ে ঘুরলেও ব্যাংকগুলো তাদের ঋণ দিতে আগ্রহী হয় না।

বস্তুত দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধে ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতায় ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে এ খাতে অপরাধ করার অথবা অপরাধ করে পার পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে। বন্ধ হবে অনৈতিক চর্চা। এ খাতের কোথাও কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি ধরা পড়লে সব ধরনের রাজনৈতিক বিবেচনার উর্ধ্বে থেকে নিতে হবে ব্যবস্থা।



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS