প্রতিবাদী মুখোশের আড়ালে সুবিধাবাদীর উত্থান
প্রতিবাদ মূলত অনিয়ম, দুর্নীতির বিরুদ্ধে হুমকি স্বরূপ। যা যুগের বিবর্তনের ফলে সৃষ্ট সকল অদৃশ্য বাঁধাকে ভেঙে দেয় এবং নতুন আশার সূর্যকে উদিত করে। অনিয়মকে ভাঙতে সৃষ্টি হয় প্রতিবাদের আর সেখান থেকে জন্ম নেয় একজন নির্ভীক বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতিবাদী ব্যক্তির।
প্রতিবাদ হওয়া উচিত অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য নহে। কিন্তু কেন জানি আজকাল প্রতিবাদের বিষয়বস্তু এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যেখানে শুধুমাত্র নিজস্বার্থে আঘাত লাগলেই আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিবাদী মনোভাব প্রকাশ পায়।
আর এই নিজস্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিবাদী হয়ে উঠার মনোভাবের কারণে বর্তমানে সমাজের বা দেশের মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মানুষের মধ্যে যেমন স্বস্তি ফিরেছে তেমনি মানুষ ফিরে পেয়েছে তার হারানো বাক স্বাধীনতা।
আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসন আমলে দেশের বিভিন্ন খাতে রেখে যাওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুুষ কথা বলতে শুরু করেছে। বর্তমানে বাক স্বাধীনতাকে এমন ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে যেখানে এক শ্রেণির মানুষের উত্থান ঘটেছে যারা বাক স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য বিভিন্ন বিষয়কে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার কাজে লিপ্ত হয়েছেন।
কিন্তু বাক স্বাধীনতার নামে যারা আজকে বিতর্ক ছড়িয়ে দেশ অস্থিতিশীল করে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার পরিকল্পনায় ব্যস্ত অতীতে তারাই বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা ভোগ করে নিজেদের বাক স্বাধীনতার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের বাক স্বাধীনতাকে হরণের কাজে সাহায্য করেছেন। তাদের সুবিধা ভোগের মাত্রা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো যে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ শাসনামলে ঘটে যাওয়া দুর্নীতি, লুটপাট, অন্যায়, অবিচার এমনি জুলাই মাসের ঘটে যাওয়া গণহত্যার সময়ও নিজেদের অবস্থান থেকে চুপ ছিলেন।
তাদের সুবিধাবাদী এই অবস্থানের ফলস্বরূপ আজকে বাংলাদেশের মানুষের কাঁধের উপর ঋণের বোঝা। তাদের সুবিধাবাদী মনোভাবের কারণে আজকে গার্মেন্টস শিল্প অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দেশের মানুষের ওপর বিশাল বৈদেশিক ঋণ, দেশের আইন শৃঙ্খলার টালমাটাল অবস্থা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতি সহ নানা সমস্যা থাকার পরেও আমাদের মধ্যে দেশপ্রেমিক, সুশীল সমাজের মতো বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের আগমন ঘটছে যারা দেশের বিভিন্ন বিষয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
তবে যারা প্রশ্নবিদ্ধ করছেন তাদের একটা বড় অংশকে দীর্ঘদিন যাবত কোনো অন্যায়ের বিপক্ষে কথা বলতে দেখা যায়নি। কিন্তু আজকে তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা সকলের সামনে নিজেদের অন্যায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদী রূপে উপস্থাপন করছেন।
আরও পড়ুনকিন্তু প্রতিবাদের বিষয়টি হওয়া উচিত নিরপেক্ষ এবং সবসময় ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে। যেখানে কোনো অন্যায় স্থান পাবে না। নিজের দুর্বলতা অন্যায়ের বিপক্ষে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না স্বজনপ্রীতি থাকবে না। একজন সত্যিকারের প্রতিবাদী ব্যক্তি সেই যে সকল কিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্যায়ের বিপক্ষে দাঁড়ায় ব্যক্তি স্বার্থের জন্য নয়।
বর্তমান দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে সকলের উচিত বিতর্ক সৃষ্টি না করে সকল ভেদাভেদ পরিহার করে একটি সুখি সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার পথ খুঁজে বের করা এবং সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে তা সমাধান করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
দিন শেষে প্রশ্ন থেকেই যায় আমরা নিজেদের জায়গা থেকে কতটুকু অন্যায়ের বিপক্ষে প্রতিবাদ করতে সক্ষম? আমাদের চারিপাশে যে সকল প্রতিবাদী ব্যক্তি রয়েছে সবাই কি সত্যিকারের প্রতিবাদী নাকি সুবিধাবাদী ব্যক্তি? যারা কিনা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রতিবাদী মুখোশ ধারণ করে আছে।
লেখক : সম্মান প্রথম বর্ষ, ইতিহাস বিভাগ
রাজশাহী কলেজ
01773-963178
মন্তব্য করুন