ভিডিও শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫

জমিতে অধিক সার ব্যবহার নয়

জমিতে অধিক সার ব্যবহার নয়

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি কৃষি। উদ্বেগের বিষয় হলো অতিরিক্ত ব্যবহারে মাটির উর্বরাশক্তি কমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা কৃষির অপরিকল্পিত নিবিড়করণ, পরিকল্পনাহীন শস্য আবর্তন, উচ্চফলনশীল নানা শস্যের চাষ বৃদ্ধির ফলে মূলত মাটিতে জৈব উপাদানের ঘাটতি হচ্ছে। পত্রপত্রিকার খবরে বলা হয়, দেশে ইতোমধ্যে লবণাক্ততার কারণে ১৮ জেলার ৯৩ উপজেলার ১০ লাখ ৫৬ হাজার হেক্টর কৃষিজমির মাটি কমবেশি দূষিত হয়ে পড়েছে।

জৈব উপাদানের ঘাটতি ধরা পড়েছে ৫২ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে। মাটির স্বাস্থ্যরক্ষায় আগে দুবার ধান চাষের মাঝখানে নানা জাতের ডাল চাষ করা হতো। কারণ প্রাকৃতিক উপায়েই শিম বা ডাল ফসল মাটিতে জৈব উপাদান যোগ করে। অর্থাৎ ধান চাষে যা ঘাটতি হয়, এ ফসলগুলো তা পুষিয়ে দেয় মাটিকে। অন্যদিকে উফশী ফসলের উৎপাদন বেশি হলেও তা মাটি থেকে প্রচুর পুষ্টি উপাদান টেনে নেয়।

কৃত্রিম সার এই ঘাটতি তৈরি করতে পারে না। ফলে মাটিতে গাছের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় যে পুষ্টি উপাদান নিবিড় চাষের ফলে অপসারিত হয়, সেই হারে তা আর মাটিতে যোগ হয় না। নিয়ম না মেনে উচ্চ ফলনের আশায় কৃষি জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়ছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই ফল ও সবজি সংগ্রহ করে বাজারজাত করছেন কৃষকরা।

ফলে কৃষিপণ্যে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়ে ক্যানসারের মতো বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। সেই সঙ্গে দিন দিন প্রাকৃতিক পরিবেশের বিপর্যয়, মাটির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশ ও পুষ্টিবিদদের দাবি, সরকার যেন ফসলে বিষ ব্যবহারে একটি নীতিমালা জারি করে। যাতে ফসলে যত্রতত্র বিষ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে না পারে কোম্পানিগুলো।

এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ থেকে কৃষি কাজে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি প্রাকৃতিকভাবে তৈরি কম্পোস্ট সার ও জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ তাদের। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, একই জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন ও অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশের মোট আবাদি জমির সাড়ে ৭২ শতাংশে জৈব ঘাটতি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে মাটি।

আরও পড়ুন

ফসল উৎপাদনের জন্য সুষম মাটিতে পাঁচ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকা প্রয়োজন, অথচ দেশের অধিকাংশ এলাকায় জৈব পদার্থের উপাদান এক শতাংশেরও নিচে নেমে গেছে। এতে ভেঙে পড়েছে মাটির স্বাস্থ্য। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখতে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার এবং ভূমি অর্থনীতি বিষয়ক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাটি হচ্ছে কৃষির মূলভিত্তি। ফসলের প্রয়োজনীয় খাদ্য উৎপাদন সমৃদ্ধ মাটি না হলে কাক্সিক্ষত ফসল পাওয়া যায় না।

মাটি এক জীবন্ত সত্তা। তাই মাটিরও ভালো বা মন্দ লাগা আছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বাড়তি খাদ্য চাহিদা মেটাতে গিয়ে একই জমিতে বছরে বর্তমানে তিন থেকে চারবার ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। আবাদ করা হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল অথবা হাইব্রিড জাতের ফসল। এসব ফসল মাটি থেকে বিপুল পরিমাণ পুষ্টি উপাদান শোষণ করছে। উপরিভাগের উর্বর মাটি ব্যবহার হচ্ছে ইটভাটা ও নানা উন্নয়ন কাজে। ফলে জমি হারাচ্ছে স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা।

কাজেই মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অতি জরুরি। বাস্তবতা হলো, কৃষির প্রধান অবলম্বন মাটির উর্বরা শক্তি রক্ষা করতে হলে সবার আগে কৃষককে সচেতন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের কৃষি কর্মকান্ড যেন মাটি, পানি আর ফসলের বাস্তুতন্ত্রকে নষ্ট করে না দেয় তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরকেই নিতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখেনা মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় এর ব্যবহারকারীরা যদি সচেতন না হয় তবে উর্বরাশক্তি নষ্ট হওয়া রোধ করা যাবে না। এমন বিশাল কর্মকান্ড ঠিকভাবে সম্পাদন করা যাবে না। বরং এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব যুক্ত হলে আরও বিপর্যয় নেমে আসবে। কাজেই মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় এখনই সচেতন হতে হবে আর সেজন্য প্রয়োজন প্রচার এবং কৃষি বিজ্ঞানের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পাকিস্তানে বাংলায় চলবে ‘দেয়ালের দেশ’

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভূমিকম্প অনুভূত

ক্যালিফোর্নিয়ায় ভবনে বিমান আছড়ে পড়ে ২ জন নিহত 

দ. কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউনকে গ্রেপ্তারে বাড়িতে হাজির তদন্তকারীরা

২০২৪ সালে রেকর্ডভাঙা আয় করেছেন ধনকুবেরা

৫২৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ: কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ৫ জনের নামে মামলা