শোকাবহ ১৫ আগস্ট
বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে শোক ও কলঙ্কিত দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের সেই ১৫ আগস্ট ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে দেশি বিদেশি চক্রান্তকারীদের মদদে এদেশেরই কিছু দুর্বৃত্ত নৃশংসভাবে হত্যা করে। পরিকল্পনাটি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে সবংশ নিশ্চিহ্ন করা এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে লোপাট করে দেওয়া। সেদিন রেহাই পায়নি বঙ্গবন্ধুর শিশু পুত্র রাসেল কিংবা পুত্রবধূরাও। ঘাতক চক্র তাকে বা তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি; এ দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা কুক্ষিগত করে হত্যাকারীদের নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করেছিল, পুরস্কৃত করেছিল। খুনিদের রক্ষা করার জন্য দেশের সংবিধানেও হাত দেওয়া হয়েছিল। এই পৈশাচিক হত্যাকান্ডের বিচার হওয়াকে রহিত করেছে ইনডেমনিটি আইন পাস করার মাধ্যমে। এমনকি এক খুনিকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ারও সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। ফলে জাতির ঘাড়ে বহুকাল ধরে চেপে বসেছিল শোকের পাশাপাশি বিচারের দায়। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় এসে ইনডেমনিটি আইনের মতো কলঙ্কিত আইনটিকে বাতিল করে এবং শুরু হয় প্রচলিত আইনে বিচার। অবশ্য এ জন্য আরও অনেক বছর অপেক্ষা করতে হয়। ঘটনাবহুল অনেক বছর পার করে বিচার সম্পন্ন না হওয়ায় জনগণের চাপা ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ঘটে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে। দেশের মানুষ এ জঘন্য খুনের বিচারের দাবিকে ভোটের মাধ্যমে সমর্থন জানায় পুনর্বার। ফলে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে আদালতের রায় কার্যকর করার মাধ্যমে। তবে সে সময় খুনিদের কেউ কেউ ছিল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদেরও অনেককে দেশে ফিরে এনে রায় কার্যকর করা হয়েছে। তবে সবাইকে ফেরত আনা সম্ভব হয়নাই। কেউ কেউ নাম পরিচয় বদল করে বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। তাদেরও ফেরত আনার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনা শুধু ব্যক্তিকে হত্যা প্রয়াস ছিল না; ছিল জাতির স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত। স্বাধীনতার আদর্শকে নিরঙ্কুশ করতে এখন আমাদের প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বাস্তবায়ন করা। আর সে আদর্শ হলো গণমানুষের ভাত-কাপড় নিশ্চিত করা, কৃষকের হাতকে শক্তিশালী করে তোলা, আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠা করা, সমাজের ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূর করা। এসব বাস্তবায়ন করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতি হিসেবে আমরা জাতির জনকের খুনের দায় কিছুটা হলেও শোধ করতে পারব। আজকে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তর করার কাজে অধিকতর মনোনিবেশ করতে হবে আমাদের।
বাংলাদেশকে বলা হয় এশিয়ার বাঘ। উন্নয়নের রোল মডেল। আমরা আশাবাদী। আমাদের এই অর্জনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। অসাম্প্রদায়িকতা ও সম্প্রীতির সুমহান আদর্শ মুছে ফেলার যে অপচেষ্টা চলেছিল, কালের পরিক্রমায় তা ব্যর্থ প্রমাণ হয়েছে। দেশে এখন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দৃশ্যমান অর্জন সম্ভব হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উত্তরণ ঘটেছে বাংলাদেশের। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু নিজের পায়ে দাঁড়ানোর যে প্রত্যয় ব্যক্ত করতেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ তারই সার্থক রূপায়ন।
আজকের এই দিনে আমরা বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি পরম শ্রদ্ধায়। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার বাস্তবায়নের ভেতর দিয়েই পরিশোধ করতে হবে আমাদের দায়। এই দায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের। আজ শোক হোক আমাদের শক্তির উৎস।
আজকের এই শোকের দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সহ ১৫ আগষ্টের কাল রাতে শাহাদত বরনকারী সকলকে। কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা করি তাদের সকলের আত্মার মাগফিরাত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।