নতুন করে আবারও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি সংকটে ফেলেছে পোলট্রি খামারিদের। এমনিতেই পোলট্রি খাবারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ খাতের ব্যবসায়ীরা সংকটে রয়েছেন। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত সেই সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ব্যবসা টেকানো যাবে কি-না, এ নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কায় পড়েছেন পোলট্রি খামারিরা।
বিশ্ব বাজারে পোলট্রি খাদ্যের কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে কাঁচামালের জন্য আগের চেয়ে খরচ বেড়েছে। ডলার সংকটে অনেক ক্ষেত্রে এলসি খুলতে পারছেন না আমদানিকারকরা। এ ছাড়া দেশে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। এসব কারণে সংকটে পড়েছেন পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) হিসাবে, বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত মুরগির ডিমের ১২ থেকে ১৫ শতাংশ আসে প্রাতিষ্ঠানিক খামারগুলো থেকে। বাকি ডিম আসে প্রান্তিক খামার থেকে। আমদানি নির্ভর খাদ্য সামগ্রী ও ওষুধের পাশাপাশি দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যয় এবং পরিবহণ খরচ বাড়ার কারণে বর্তমানে প্রান্তিক খামারিদের প্রতিটি ডিমে উৎপাদন খরচ হচ্ছে প্রায় সাড়ে ১০ টাকা।
খামারিদের হিসাবে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই ব্যয় হয় খাবার বাবদ। খাবার উৎপাদনকারীদের তথ্য মতে, এসব খাবারে ব্যবহৃত প্রধান উপকরণ ভুট্টার চাহিদার ৩৬ শতাংশই আমদানি করতে হয়। সয়াবিন আমদানি করতে হয় ৯০ শতাংশ। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (এফআইবি) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, দুই বছর আগে বিশ্ব বাজারে প্রতিটন ভুট্টার দাম ছিল ২২০ থেকে ২৩০ ডলার, যা বেড়ে হয়েছে ৩৩০ থেকে ৩৬৪ ডলার।
কাঁচামালের আমদানি খরচ শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বাড়লেও পোলট্রি খাবারের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের মতো। এতে ফিড মিলগুলোর লোকসান হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আশির দশক থেকেই পোলট্রি খাত কৃষির উপখাত হিসেবে গ্রামীণ কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাণিজ্যিকভাবে ব্যক্তিগত বিনিয়োগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বড় আকারের খামার গড়ে ওঠে। আমরা দেখেছি অনেক বেকার যুবক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে খামার ব্যবসায় নেমে পড়তে। তাতে পোলট্রি খাতের যেমন দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটে, তেমনি এ ব্যবসায়ের সফলতায় অনেকেরই আশা ফেরে।
করোনার আগেও সরকারি-বেসরকারি সহায়তায় পোলট্রি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ছিল। সেখানে প্রত্যক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মানুষের এবং পরোক্ষভাবে আরও ৪০-৫০ লাখ জনগোষ্ঠী। দেশের বড় কর্মসংস্থানের অন্যতম এ খাতে হঠাৎ করোনার প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই সরকারের বিশেষ দৃষ্টির দাবি রয়েছে। আমরা জানি, সরকার এ খাতের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে সবাই সেভাবে সুফল পাননি।
আমরা চাই, অবস্থা বিবেচনায় খামারিদের বাঁচাতে এবং পোলট্রি শিল্প সুরক্ষায় ব্যাংক ঋণদান সহজ শর্তে হওয়া প্রয়োজন। নতুন করে আবারও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি সংকটে ফেলেছে পোলট্রি খামারিদের। এমনিতেই পোলট্রি খাবারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এ খাতের ব্যবসায়ীরা সংকটে রয়েছেন। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত সেই সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে ব্যবসা টেকানো যাবে কি-না, এ নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কায় পড়েছেন পোলট্রি খামারিরা। এ মূল্য বৃদ্ধির চাপ সামাল দিতে হবে খামারিদের। তাতে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।
খামারিরা বলছেন, বর্তমানে যে দামে বাজারে মুরগি ও ডিম বিক্রি হচ্ছে তাতে অনেক খামারি লোকসান গুণছেন। পোলট্রি শিল্পে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলছে- তা খতিয়ে দেখতে হবে। পোলট্রি শিল্পের সাম্প্রতিক সংকট নিরূপণ ও তা উত্তরণের উপায় খুঁজতে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করুক এবং সে অনুযায়ী ত্বরিত ব্যবস্থা নিক।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।