ওসমান গনি
পৃথিবীর প্রতিটা দেশের মানুষের কাছে তার দেশের ভাষা অতি প্রিয় এবং মধুর। তার মধ্যে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আমাদের কাছে সকল ভাষার চাইতে অধিক প্রিয়। কারণ আমরা এ ভাষায় কথা বলে আনন্দ ও তৃপ্তি পাই অতি সহজে তা আর কোন দেশের ভাষায় সম্ভব না।তাছাড়া আমাদের মাতৃভাষা বাংলা আজ আন্তর্জাতিক ভাষার মর্যাদা লাভ করছে। এটা আমাদের বাঙালিদের কাছে সবচেয়ে গৌরবের বিষয়। আজ আমাদের এই বাংলা ভাষায় বিশ্বের অনেক লোক কথা বলতে শিখেছে।
অনেক বিদেশী মানুষ আমাদের বাংলা ভাষায় কথা বলে থাকে। হয়তো একদিন আমাদের এ বাংলা ভাষা ইংরেজি ভাষার মতো সারা পৃথিবীতে স্থান দখল করবে। আর তখন বাংলাদেশের মানুষ সারাবিশ্বে অতি আনন্দে চলাফেরা করতে পারবে। বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে বাংলা ভাষায় কথা বলে তাদের অভাব অভিযোগ জানাতে পারবে সে দেশের মানুষের কাছে।
২০০৯ সালের হিসাবমতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সামার ইনস্টিটিউট অব লিঙ্গুইস্টিকসের ভাষ্য মতে, পৃথিবীতে এখন ভাষার সংখ্যা ছয় হাজার ৯০৯টি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভাষাগুলোর মধ্যে আমাদের মাতৃভাষা বাংলা অন্যরকম। কোনো ভাষার জন্য তো আর কোথাও জীবন দেয়নি কেউ, ভাষার দাবিতে তো মরণপণ সংগ্রাম আর কোথাও হয়নি। তাই, আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা, প্রিয় বাংলাভাষাকে নিয়ে আমাদের ভালোবাসা ও গর্ব অনেক বেশি।
কারণ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যের নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করেছিল। কারণ প্রাকৃতিক নিয়ম অনুসারে অনৈক্যের ওপর ঐক্য সবসময়ে বিজয় লাভ করে। বাঙালি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কারণেই সেদিন মাতৃভাষাকে অতি সহজে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছিল। বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে সেদিন অসংখ্য বাঙালি তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল। তাদের মধ্যে রফিক, বরকত, জব্বার, সালামসহ আরও নাম না জানা অনেকে। বাঙালি জাতি আজো ভাষার জন্য আত্মদানকারীদের ভুলতে পারেনি। ভুলবেও না কোনদিন।
যতদিন বাংলাদেশ থাকবে। কিন্তু দু:খের বিষয় আজ এত বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা ও সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে বারবার। চারিদিকে আজ পশ্চিমা এবং হিন্দি ভাষার আগ্রাসনের ছড়াছড়ি। বিশেষ করে আমাদের দেশের নারীদেরকে আকৃষ্ট করছে ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালগুলো। তরুণ সমাজও পশ্চিমা অশ্লীল সংস্কৃতিতে হাবুডুবু খাচ্ছে।
তাছাড়া রাষ্ট্রের সকল পর্যায়ে বাংলা ভাষার ব্যবহার করার কথা থাকলেও সেখানে আজ সিংহভাগ ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজি ভাষা। সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং বিচারিক কাজে বাংলা ভাষার ব্যবহার করার কথা বললেও এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে ইংরেজি ভাষা। অবশ্যই সম্প্রতি আমাদের দেশের প্রধান বিচারপতি দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও বাংলাভাষা ব্যবহারের কথা বলেছেন এজন্য আমরা তাকে সাধুবাদ জানাই।
কিন্তু সেটা কতটুকু কার্যকর হবে সেটা দেশের শাসকশ্রেণীর ওপর নির্ভর করবে। দেশ পরিচালনায় যখন যে শাসকশ্রেণী ক্ষমতায় আসবে তার ওপর নির্ভর করবে দেশের অবস্থা। তাছাড়া আমাদের দেশের ধনী ব্যক্তিরা তাদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাকে উপেক্ষা করে ইংরেজিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এমনকি বাংলাকে ইংরেজি এবং হিন্দির সাথে মিশিয়ে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
আজও রাজধানী ঢাকা সহ দেশের সব অঞ্চলের বিভিন্ন সাইনবোর্ডগুলো লেখা হয় ইংরেজিতে, আবার বিয়ে ও জন্মদিনের কার্ডগুলো আজ বাংলার পরিবর্তে ইংরেজিতে লেখা হয়। বানানের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত প্রমিত বাংলা নিয়ম একেবারেই কম ব্যবহার করা হয়।
যে মাতৃভাষা বাংলাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে গিয়ে এ জাতির বীর সন্তানেরা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছিল সে মাতৃভাষা বাংলাকে এইভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা মেনে নেওয়া যায় না। আর আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ঐক্যহীনতার কারণে মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার্থে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।
বাংলাভাষার মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করানোর জন্য আমাদের সকলকে ভাষার প্রতি যত্নশীল হতে হবে। দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল মানুষকে বাংলাভাষার প্রচলন ও তার ব্যবহারে একত্রে হয়ে কাজ করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
Email: [email protected] 01818-936909
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।