বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে এ দেশে ব্যবহৃত ওষুধের সিংহভাগই আমদানি করা হতো বিদেশ থেকে। সামান্য যে ওষুধ তৈরি হতো দেশে তার গুণগতমান নিয়েও ছিল প্রশ্ন। কিন্তু স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পর বাংলাদেশ চাহিদার সিংহভাগ ওষুধই নিজেরা উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে পৃথিবীর ১৬০টি দেশে।
এর মধ্যে ইউরোপ আমেরিকার বাজারেও জেঁকে বসেছে বাংলাদেশের ওষুধ। যে সব দেশ ওষুধের মানের ব্যাপারে আপসহীন তারাও বাংলাদেশের ওষুধের ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বমানের ওষুধ উৎপাদন করছে। ওষুধ রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশ্বের অনেক দেশে ওষুধ উৎপাদনের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা না থাকায় বাংলাদেশ খুব দ্রুত উন্নত মানের ও স্বল্প মূল্যের জেনেরিক ওষুধ তৈরিতে বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হতে যাচ্ছে বলছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা।
ওষুধ উৎপাদনের বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সামনে থাকা সুযোগের কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি শুধু ভারত ও চীনের ফার্মাসিউটিক্যাল উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে।
ওষুধ রপ্তানি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। বাংলাদেশ অ্যাসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতির ভূমিকায় থাকা জনাব মুক্তাদির জানান, চীন ও ভারতের যথাক্রমে ২২০ বিলিয়ন ও ৪০ বিলিয়ন ডলারের বড় বাজার রয়েছে এবং তা আরও বাড়ছে।
সুতরাং, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর ভারত এবং চীনের পক্ষে এত বিশাল চাহিদা মেটানোর যথেষ্ট সক্ষমতা নাও থাকতে পারে; যোগ করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সবাই ভারতের পর দ্বিতীয় বিকল্প খুঁজছে, যেখানে বাংলাদেশের দারুন সুযোগ রয়েছে।
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে শত বিতর্ক থাকলেও ওষুধ শিল্পের সুনাম বিশ্বজুড়ে। গুণগত মান ও কার্যকারিতার কারণে বাংলাদেশের ওষুধ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববাজারে। দেশের ৯৮ শতাংশ চাহিদা মিটিয়ে ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে ১৬০টি দেশে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ৪৮টি দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশের ওষুধ।
বাংলাদেশে ২১৩টি স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যা দেশের মোট ওষুধের ৯৮ শতাংশ পূরণ করছে। অপরদিকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ ওষুধ আমদানি করে। ২০২২ সালের তৃতীয় প্রান্তিক পর্যন্ত বাংলাদেশে ওষুধের বাজারের আকার ছিল ৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। গত এক দশকে বাজার ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২৭ সালের মধ্যে এটি ৬ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, লিকুইড প্রিপারেশন, ড্রাই সাসপেনশন, ইনজেকশন, ন্যাজাল স্প্রে ও স্যাশের মাধ্যমে গ্র্যানিউল সহ প্রায় সব ধরনের ডোসেজ উৎপাদনে সক্ষম। এখন ওষুধ উৎপাদকরা তাদের প্রতিযোগিতামূলক শক্তিমত্তা বাড়ানোর জন্য ওষুধের কাঁচামাল বা এপিআই উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। উৎপাদন ভিত্তিক ও প্রশিক্ষিত জনশক্তি বাড়ায় এ খাতের যথেষ্ট উন্নতি হচ্ছে।
গত কয়েক বছরে এই খাতের উন্নতি বেশ দৃশ্যমান। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের ওষুধের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা দেশের জন্য সুখবর, যে করেই হোক এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। ওষুধ শিল্পের সামনে যে সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে তা কাজে লাগাতে ওষুধের মানের ব্যাপারে হতে হবে আপসহীন। আমাদের প্রত্যাশা সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ওষুধের মান ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে যথাযথ মনিটরিং অব্যাহত রাখবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।