হৃদয়ে সৌজন্যতার চেতনা ধারণ করতে হবে

নবী নাজমুল হক তালুকদার

প্রকাশিত: মে ২৪, ২০২৩, ০২:১৫ রাত
আপডেট: মে ২৪, ২০২৩, ০৫:০০ সকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত সমস্যা, সংকট, ঝুট ঝামেলায় পড়তে হয়। কখনও কখনও তা বিব্রতকর অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। এমন কি ভূক্তভোগী কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েন। বোধ করি জীবন যুদ্ধ এ রকমই।

আশার কথা, আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। দুঃখজনক যে, এমন পরিস্থিতিতে অনেকে সামান্য সৌজন্যটুকু দেখাতে ব্যর্থ হন। অথচ এর জন্য পকেটের টাকা খরচা করতে হয় না। হাসি মুখে কথা বলা, ধন্যবাদ জানানো, দুঃখ প্রকাশ ইত্যাদি ছোট ছোট ব্যাপারগুলোয় আমরা গুরুত্ব দেই না।

এমনকি প্রয়োজন আছে এমনটাও অনুভব করি না। আবার কেউ কেউ দাম্ভিকতার কারণে পাশ কাটিয়ে  এড়িয়ে চলেন। অথচ আমরা (মানুষ) সামাজিক জীব। সকলকে নিয়েই সমাজ। উল্লেখিত অতি-সাধারণ ব্যাপার গুলোই আমাদের অনীহা সামাজিক বন্ধন নড়বড়ে করে দিচ্ছে। এমন কি মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য সম্পর্ক অতিমাত্রায় দুর্বল করে দিচ্ছে।

অনেক ক্ষেত্রে বন্ধুত্বে ফাটল ধরাচ্ছে। যে কারণে একই সমাজে বসবাস করেও দিন দিন পরস্পরের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা একঘরে হয়ে পড়ছি। অন্যভাবে বলা চলে আমরা স্বনির্বাসন বরণ করছি। কখন কার কী বিপদ আপদ আসবে কেউ বলতে পারে না। সেসব থেকে উদ্ধারে কার প্রয়োজন দরকার হবে তাও কারো জানা নেই।

একে অন্যের প্রয়োজনের চেতনা থেকে অনাদিকাল থেকে “সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে” কথাটি প্রচলিত আছে। অর্থাৎ আমরা একক ভাবে কোন সমস্যা সমাধানে সক্ষম নই। সঙ্গতঃ কারণেই পরস্পরের সঙ্গে সৌজন্যতা বজায় রেখে চলার বিকল্প নেই বা ইহা অপরিহার্য।

কারো ক্ষতি, মনোবেদনা বা সংকটে সহানুভূতি নিয়ে তার পাশে দাঁড়াতে পারি। যা তার মুছড়ে পড়া মনে জোর বাড়াবে। এটাই সকলের কর্তব্য। এই চেতনা সব মানুষের মধ্যেই থাকা উচিত। জীবন প্রবাহে কত ক্লেশই না মাড়াতে হয়। সৌজন্যতার তাগিদ থেকে একটু সান্ত্বনা বা অভয়বাণী ভূক্তভোগীর জীবনকে উজ্জ্বীবিত করতে পারে।

কোন লোকসান তো নেই? তবু আমাদের ভিতরে কার্পণ্যতা কেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠে? আমরা কেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে পীড়িত মানুষটির পাশে শক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারি না? ইহা কি আমাদের দায়িত্ব নয়? না পারাটা এক ধরনের হীনমন্যতা বৈকি।

আমাদেরকে হীনমন্যতার নাকপাশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এই অতিসামান্য উদারতা প্রদর্শনে নিশ্চয়ই আত্মতৃপ্তি লাভ করা যায়। মানুষ কত বড় বড় ত্যাগ শিকার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, লাভ করেছেন অমরত্ব। আমরা ক্ষুদ্র মানুষ হলেও ছোট ছোট ত্যাগ মেনে নিতে পারি না কি?

দিন দিন সমাজে সভ্যতা বিকশিত হচ্ছে। আমরা আধুনিক হচ্ছি। সমাজে পরিবর্তন আসছে। সৌজন্যতা, সহমর্মিতা, ভদ্রতা বোধ ইত্যাদি হৃদয়ে লালন করতে হবে। যান্ত্রিক সভ্যতায় মানুষের আরাম আয়েশ বৃদ্ধি হয়েছে বটে। যদিও তা সর্বসাধারণের বেলায় না। ষোল আনা উপযোগিতা ভোগ করছেন বিত্তবান গোষ্ঠী। ধনীক ও বিত্তবান দু’টি শ্রেণীতে মানুষ বিভক্ত। বোধ করি সে কারণেই আমাদের মানবিক চেতনা লোপ পাচ্ছে।

আমরা ছা-পোষা নিরীহ মানুষকে পছন্দ করি। সাধারণতঃ দেখা যায় এসব সরল মানুষদের বেশি ঝুট ঝামেলা পোহাতে হয়। অথচ ঐসব পছন্দের ব্যক্তিদের সমস্যা সংকটে নীরব থাকি। আমরা কিনা আধুনিকতা ও সভ্যতার বড়াই করি। মনের সংকীর্ণতা আমাদের মিছে অহংকার দিনের আলোর মত পরিষ্কার। সৌজন্যতা অবশ্যই বিশেষ ধরনের বিনয়।

বিনয়বান মানুষ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, লাভ করে প্রশংসা। বিনয় একটি বিরাট গুণ। আমাদেরকে পরস্পরের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। সকলের মধ্যে সৌজন্যতা বোধের উত্তরণ ঘটুক ইহাই আমাদের প্রত্যাশা।


লেখক: দিন বদলে ব্রতী
০১৭১৪-৮৫৯২০৫ 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়