বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

প্রকাশিত: মে ২৫, ২০২৩, ০১:০৮ রাত
আপডেট: মে ২৫, ২০২৩, ১১:২৯ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রাকৃতিকভাবে জুন থেকেই শুরু হয় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজনন ঋতু তবে দেখা যাচ্ছে, বছরের অন্যান্য সময়েও লোকজন ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে এডিস মশার কামড় থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আশে পাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাসাবাড়ির ছাদ, আঙ্গিনায় যেন পানি জমে না থাকে সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। আমরাও তাই মনে করি।

চলতি বছর সারা দেশে এ পর্যন্ত এক হাজার ৪১৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে ১২ জন মারা গেছে। প্রথম পাঁচ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর ঘটনায় এটাই সর্বোচ্চ। ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু গত বছরের তুলনায় প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। গত শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত উপাত্ত থেকে এসব তথ্য জানা যায়। অধিদপ্তর ২০১৯  সাল থেকে ডেঙ্গুর তথ্য নিয়মিত প্রকাশ করে আসছে।

প্রতিবেদনে ওই সময় থেকে গত শনিবার পর্যন্ত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘন্টায় নতুন করে আরো ৫২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ সময়ে কারো মৃত্যু হয়নি। বর্তমানে সারা দেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ১৬২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি ১৪২ জন, ঢাকার বাইরে ২০ জন। ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল ৩৫২ জন। আক্রান্তদের কেউ মারা যায়নি।

২০২১ সালের একই সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ছিল ১০০ জন। কেউ মারা যায়নি। ২০২০ সালের মে পর্যন্ত রোগী ৩০৬ জন। কোনো মৃত্যু নেই, ২০২১ সালের মে পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৩২৪ জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়। ওই বছর হাসপাতালে মোট এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন ভর্তি হয়। মারা যায় ১৭৯ জন। এখন পর্যন্ত ওই বছরই সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা গত বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতির সঙ্গে চলতি বছরের এ পর্যন্ত পরিস্থিতি তুলনা করে বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারি।

জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে। করোনা ভাইরাসে সংক্রমণে বিপর্যস্ত হয়েছিল পুরো বিশ্ব। যার প্রভাব পড়েছে প্রায় প্রত্যেকটি খাতে। দেশেও করোনার প্রভাব পড়েছিল নানাভাবে। ফলে যখন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে আসছে করোনা পরিস্থিতি, তখন ডেঙ্গু নিয়ে শংকা তৈরি হলে তা উদ্বেগজনক। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে এমন বিষয় উঠে এসেছে যে, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে।

আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু যেভাবে বাড়ছে তা আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, এর আগে খবরে উঠে এসেছিল, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর মশার উপদ্রব বেশি, আর যে কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এখন যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির জন্য আসছে, তখন এটা মনে রাখঅ দরকার ডেঙ্গুর উপদ্রব রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। এডিস মশা ডেঙ্গুর জীবানু বহন করে। এ মশা রাতে কামড়ায় না। দিনে কামড় থেকে রক্ষা পেতে ঘরে মশা নিধনকারী ওষুধ স্প্রে করা যেতে পারে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে অযৌক্তিক ভীতিতে আতঙ্কিত না হয়ে জ্বর যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে চেষ্টা করতে হবে।

পরিমিত পানি পানে উদ্যোগী হতে হবে। গুরুতর অসুস্থ বোধ হলে হাসপাতালে ভর্তি বা চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে। এডিস মশা বন-জঙ্গলে নয় মানুষের বাসগৃহেই আস্তানা গাড়ে। এ ব্যাপারে সবাই সতর্ক হলে এ মশার আগ্রাসন একেবারে থামিয়ে দেওয়া সম্ভব। স্মর্তব্য নির্মাণাধীন ভবনের মেঝেতে, বাড়ির আঙ্গিনায় জমে থাকা স্বচ্ছ পানি এডিস মশার প্রধান উৎস স্থল। একটি স্ত্রী মশা তার পূর্ণ জীবনকালে পাঁচবার ১ হাজার মশার জন্ম দিতে পারে। ডেঙ্গু আতঙ্ক থেকে শহরবাসীকে সুরক্ষায় মশা নিধন বাড়াতে হবে। আঘাত হানতে হবে এডিসের আস্তানায়। পাশাপাশি বাড়াতে হবে নাগরিক সচেতনতাও। 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়