মশার উপদ্রব বৃদ্ধি

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩, ১০:৩২ রাত
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩, ১০:৩২ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

মশার কারণে অতিষ্ঠ শহর-নগরবাসী এমন খবর পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন সময়েই প্রকাশিত হয়েছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে শহর-নগর-বন্দরে মশার উপদ্রব বেড়েছে। এর ফলে কয়েল জ্বালিয়ে কিংবা ওষুধ ছিটিয়ে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর মধ্যে আবার এডিস মশার উপদ্রবও বেড়েছে। এডিস মশার প্রজননের মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সংখ্যার দিক থেকে গত বছরের ‘প্রথম পাঁচ মাসের’ তুলনায় প্রায় ছয়গুণ।

গত বছর এই সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু শূন্য থাকলেও এবার তা ১৩ জন। সাধারণ জুন থেকে ডেঙ্গুর মৌসুম। কারণ এই সময়ে বর্ষাকাল শুরু। তখন বৃষ্টির পানি বিভিন্ন স্থানে জমে থাকে। আর এই প্রাদুর্ভাব চলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।

তাই এই সময়টাকে ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজননকাল ধরে নেওয়া হয়। প্রজননের মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এখন এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে বৃষ্টির সম্পর্ক নেই।

এর মধ্যে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি রয়েছে। রাস্তা উঁচু করার ফলে নিচু হয়ে যাওয়া বাসাবাড়ির জমা পানিতেও এডিস মশা জন্ম নিচ্ছে।

যেহেতু দেশে আবারও ডেঙ্গুর প্রভাব বাড়ছে, সেহেতু ডেঙ্গুর সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে এডিস মশা থেকে সাবধান থাকতে হবে। আশে পাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাসাবাড়ির ছাদ, আঙিনায় যেন পানি জমে না থাকে সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

প্রাকৃতিকভাবে জুন থেকেই শুরু হয় ডেঙ্গুর জীবাণু বহনকারী এডিস মশার প্রজনন ঋতু। তবে দেখা যাচ্ছে, বছরের অন্যান্য সময়েও লোকজন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হলো এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগের প্রকোপ চলতি বছর বাড়তে পারে-এমন আশংকা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের।

আমরা বলতে চাই, যেহেতু ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপও নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, এর আগে খবরে উঠে এসেছিল, অন্যান্য বছরের তুলনায় এই বছর মশার উপদ্রব বেশি আর যে কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তের লাগাম টানা যাচ্ছে না। এখন যেহেতু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির তথ্য আসছে, তখন সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে মশার উপদ্রব এবং ডেঙ্গু বিষয়টি বারবার সামনে এসেছে। আমলে নেওয়া দরকার, জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মশার ঘনত্ব যেভাবে উচ্চহারে বাড়ছে, তাতে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশংকা রয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা এসব রোগে বেশি আক্রান্ত হতে পারে।

মশা নিয়ন্ত্রণে গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে নতুন কৌশল গ্রহণ করা জরুরি বলেও মনে করেন তারা। আমরা বলতে চাই, মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব রূপ নেওয়ার যে আশংকা রয়েছে তা এড়ানো যাবে না।

নগর পরিকল্পনাবিদদের অভিমত, মশা বৃদ্ধির পেছনে আবহাওয়া ও পরিবেশের প্রভাব থাকলেও এটিই একমাত্র কারণ নয়। এর নেপথ্যে আরও বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। এ ছাড়া নালা, ডোবা, পুকুর ও পরিত্যক্ত জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার এবং মশা মারার ওষুধ কেনা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগও উঠে এসেছে খবরে। যেখানে আলোচনায় এসেছে যে, সঠিকভাবে ডোবা, জলাধার পরিষ্কার করা হচ্ছে না। মানহীন মশার ওষুধ কেনার কারণে ওই ওষুধে কাজ হচ্ছে না। ওষুধের সঠিক মান বজায় রাখতে হবে।

এ ছাড়া এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় মানুষকে কামড়ায় সেহেতু দিনে যাদের ঘুমানোর অভ্যাস তাদের সতর্ক থাকতে হবে। এডিস মশা যেহেতু স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে সেহেতু বাড়ি বা ঘরের ফুলের টব বা কোনো পাত্রে স্বচ্ছ পানি যাতে একাধিক দিন উন্মুক্ত অবস্থায় না থাকে সে ব্যাপারে থাকতে হবে সতর্ক। এ ব্যাপারে নাগরিক সচেতনতা সৃষ্টিতেও নিতে হবে উদ্যোগ।

মশা নিধনে শুধু বরাদ্দ বৃদ্ধি নয়, প্রয়োজন সব পক্ষের সচেতনতা। রাজধানী, শহর, বন্দরের ডোবা নালা পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নেওয়া হলে মশার উৎপাত শতভাগ দূর না হলেও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়