জিলকদ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মোহাম্মদ মোস্তাকিম হোসাইন

প্রকাশিত: মে ২৬, ২০২৩, ১০:৪৬ রাত
আপডেট: মে ২৬, ২০২৩, ১১:৪৭ রাত
আমাদেরকে ফলো করুন

আরবি তথা হিজরি সালের ১১তম মাস হচ্ছে জিলকদ। হজের তিনটি মাসের মধ্যে জিলহজ্ব হচ্ছে দ্বিতীয়। আরবদের সমকালীন অবস্থার দিকে লক্ষ করেই প্রতিটি মাসের নামকরণ করা হতো। আর এ মাসটির নাম জিলকদ হওয়ার অন্যতম কারণ হলো, এই সময় আরবের লোকজন বাণিজ্য ও যুদ্ধ থেকে ফিরে আসত। ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকত না।

আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত এবং অন্যায়-অপরাধ থেকেও নিবৃত্ত থাকত। এসব কারণেই এই মাসের নাম জিলকদ। (লিসানুল আরব, ইবনে মানজুর), যদিও জিলক্বদ মাস বিশ্রামের মাস, তথাপি এ মাসের রয়েছে স্মরণীয় ঘটনা, রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব, ফজিলত ও আমল। এটি হজের তিন মাসের, (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) মধ্য দ্বিতীয় মাস।

আর, হারাম বা নিষিদ্ধ চার মাসের (মহররম, রজব, জিলকদ, জিলহজ) তৃতীয় মাস। তা ছাড়াও এ মাসটি ঈদুল ফিতর (শাওয়াল মাস) ও ঈদুল আজহার (জিলহজ মাস), এ গুরুত্বপূর্ণ দুটি উৎসব বা মাসের মাঝামাঝিতে অবস্থিত।

জিলকদ মাস আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য বিশ্রামের মাস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। কেননা, এ মাসটির আগের চার মাস, আর পরবর্তী দুই মাস ইবাদতের ব্যস্ততম মাস। তথাপি আমাদের উচিত বিশ্রাম বা অবসরের এ মাসটিকে অবহেলা না করা, সময়ের মূল্য দেয়া ও যথাসম্ভব ইবাদতে রত থাকা। কেননা, আল্লøাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টিই করেছেন শুধু তাঁর ইবাদত করার জন্য। আল-কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি জিন এবং মানুষকে এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে, তারা (শুধু) আমারই ইবাদত করবে।’ (সূরা জারিয়াত, আয়াত ৫১ : ৫৬)

তাই মুমিন-মুসলমানরা অবসর সময় পেয়ে হেলায় সময় কাটিয়ে  দেবে না, । এই সময়ও ইবাদত করবে। এ সম্পর্কে অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অবসর সময়ে ইবাদতের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘যখনই অবসর পাও দাঁড়িয়ে যাও, তোমার রবের ইবাদতে মশগুল হও।’ (সূরা ইনশিরাহ, আয়াত : ৭-৮) তাই প্রতিটি মুহূর্ত প্রতিটি সময় ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা অত্যন্ত জরুরি মুমিন বান্দারা প্রতিটা সময়কে মূল্য দিয়ে থাকে নামাজ নফল রোজা বিশেষ করে এ মাসেই হজের নিয়তে এহরাম বেদে মক্কায় গমন করে থাকেন অধিকাংশ হাজী সাহেবগণ বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে ইতোমধ্যে হাজী সাহেবগণ মক্কার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে তবে, যদিও এ মাসটিতে আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পেসিফিক কোনো আমল নির্ধারণ করা হয়নি, তারপরও আমরা ফরজ আমলগুলোর পাশাপাশি কিছু নফল আমল করতে পারি।

আর তা হলো-১. প্রতি মাসের মতো এই মাসেও বেশি বেশি নফল রোজা রাখা দরকার বিশেষ করে যারা গত মাসে কাজা রোজা আদায় করতে পারেনি তারা এই মাসে বাকি কাজা রোজা  রাখতে পারেন। ২. চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে আইয়ামে বিজের সুন্নত রোজা রাখা। ৩. প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নতে নববি রোজা পালন করা। ৪. প্রতি শুক্রবার নফল রোজা রাখা। ৫. সালাতুত তাসবিহ এবং প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ (তাহাজ্জুদ, ইশরাক, চাশত বা দুহা, জাওয়াল ও আউওয়াবিন) পড়া। ৬. বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা। ৭. গরিব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো, দান-সদকা করা। ৮ প্রতি ফরজ নামাজের পরে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করা, বাদ ফজর বাদ মাগরিব সূরা হাশরের শেষের তিন আয়াত তেলাওয়াত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ইবাদত।

ইবাদত শুধু নামাজ, রোজা ইত্যাদি নয় বরং মুমিনের জীবনের প্রতিটি কাজই ইবাদত। যাবতীয় হারাম বর্জন করে এবাদতের প্রতি যত্নশীল হওয়া দরকার। এছাড়াও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দরুদ সালাম পাঠ করা মুমিনের দায়িত্ব মনে রাখতে হবে প্রতিটি কাজ আল্লাহ এবং রাসুলকে রাজি খুশি করার জন্যই করতে হবে এজন্য প্রয়োজন নিয়তকে সহি করা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকভাবে ইবাদত বন্দেগী করার তৌফিক দান করুন আমীন।

লেখক : ইসলামিক গবেষক কলামিস্ট ও কলেজ প্রভাষক।

mostakim [email protected]


০১৭১২-৭৭৭০৫৮

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়