জাবিতে গণধর্ষণ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) স্বামীকে আবাসিক হলের রুমে আটকে রেখে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিস্ময়ে হতবাক হয়েছেন দেশবাসী। কেননা এর আগেও সিলেটের এমসি কলেজেও স্বামীকে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছিল।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে ওঠার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এসব। গত শনিবার রাত ১০টার দিকে জাবিতে ধর্ষণের ঘটনাটি জানাজানির পর থেকেই ক্যাম্পাসে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সমবেত হয়ে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
এ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো-বিশ্ববিদ্যালয়কে বাদী হয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা। তিন দিনের মধ্যে হলগুলোতে অবস্থানরত অছাত্রদের বের করা এবং এ ঘটনায় প্রক্টর, প্রভোষ্টের ভূমিকা স্পষ্টকরণ করা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লা ভুঁইয়া বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন অপরাধের বিচার হয় না।’
পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মীর মোশাররফ হোসেন হলে বহিরাগত দম্পতিকে ডেকে এনে স্বামীকে আবাসিক হলে আটকে রেখে স্ত্রীকে পাশের জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে এক ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত রোববার বিকালে আদালতে শুনানি শেষে আসামিদের তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন-জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ৪৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, ৪৬ ব্যাচের সাগর সিদ্দিকী, ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হাসান সাগর ও ৪৫ ব্যাচের হাসানুজ্জামান। তারা সবাই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ ও মীর মোশাররফ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এবং মোস্তাফিজুরের অনুসারী।
এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় ভুক্তভোগীর স্বামীর দায়ের করা মামলায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ছয় শিক্ষার্থী সনদ স্থগিতসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। ছয় শিক্ষার্থীর তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা। জাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বামীকে হলে জিম্মি করে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন১৯৯৮ সালে আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্ষকদের বিতাড়িত করেছি। আজকে আমরা আবার দেখতে পেয়েছি আমাদের এই ক্যাম্পাসে এক দল নষ্ট মানুষ যারা ক্ষমতায় বসে আছে, যারা লির্লজ্জ, অসভ্য, যাদের কোন বোধ নেই, বুদ্ধি নেই, তারা ওই চেয়ার দখল করে বসে আছে।’ দিনে দিনে বাড়ছে যৌন নির্যাতনের ঘটনা। এর ফলে দেশের সচেতন মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। মানুষ সভ্য হচ্ছে এটা যেমন ঠিক, একইভাবে এই সভ্যতার আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে মানুষের আদিম ও ঘৃণ্যরূপ।
সভ্যতার বিকাশের পাশাপাশি ছড়িয়ে পড়েছে যৌন নিপীড়ন বা নির্যাতনের ঘটনা। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়িয়ে চলেছে, নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যকে দৃষ্টি কাড়া বলে অভিহিত করা হলেও প্রদীপের নিচে বিরাজ করছে ঘোরতর অন্ধকার। বিচারহীনতার সস্কৃতির কারণেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে অপরাধীরা।
‘ক্ষমতা’ বা ‘প্রভাব’-এ দুটি পরিচয় যেন সব অন্যায়-অপরাধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরা নিজেদের আইনের উর্ধ্বে বলে বিবেচনা করে। অপরাধ করেও অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ার যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি জাতিকে জিম্মি করে রেখেছে নারী নির্যাতন রোধে সে জিম্মি অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ধর্ষকদের প্রাথমিকভাবে বয়কট করতে হবে। পাশাপাশি এদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা দরকার যাতে আর কেউ নারী নির্যাতনের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করতে দু:সাহস না দেখায়, তাও নিশ্চিত করতে হবে। দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দরকার, যাতে এমন ঘৃণ্য অপরাধ করতে দু:সাহস না দেখায়।
মন্তব্য করুন