মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা
মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির চলমান সংঘাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ সীমান্তে। জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে সীমান্ত বাজার, দলে দলে ঘর ছাড়ছে সীমান্তবাসী। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে নিক্ষিপ্ত মর্টার শেলে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের অভ্যন্তরে বাংলাদেশিদের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুইজন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি নারী, অন্যজন রোহিঙ্গা পুরুষ। তথ্য মতে, সোমবার বিকাল পৌনে তিনটার দিকে এই ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্না ঘরের উপর মর্টার শেলটি এসে পড়ে।
বলা বাহুল্য, মিয়ানমারের চলমান অভ্যন্তরীণ সংঘাতে সীমান্তে এলাকায় মর্টার শেল চলে আসা এবং তাতে নিরীহ মানুষের হতাহতের ঘটনা কোনোক্রমেই কাক্সিক্ষত নয়। বিদ্রোহীদের প্রচন্ড আক্রমণে টিকতে না পেরে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) দুই শতাধিক সদস্য পালিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত মঙ্গলবার ভোর থেকে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে গোলাগুলির শব্দ বেশি শোনা যাচ্ছে। ভোরে এই সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির ২৬৪জনকে নিরাপদে নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে বিজিবি। জেলা প্রশাসক নির্দেশ দিয়েছেন, উপজেলা থেকে ২৪০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার। গত চারদিন ধরেই সীমান্তে সংঘাত চলছে। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশে দুজন নিহতও হয়েছে।
এরপর রাতভর ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী (মিয়ানমারের) এলাকায় গোলাগুলি চলতে থাকে। এমন পরিস্থিতি সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মানুষজন নিরাপদে সরে গিয়েছেন। মূলত গত চার দিনের সংঘাতে সীমান্ত লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় গুলি বা মর্টার শেল পড়লেও সোমবার দুপুরে মৃত্যুর ঘটনা পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।
আরও পড়ুনএদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ উত্তেজনার জেরে বাংলাদেশে তাদের সীমান্তরক্ষীরা প্রবেশ করছে এবং তাদের মর্টার শেলের আঘাতে দুইজন নিহত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত তাংকিউ মোয়েকে মঙ্গলবার সকালে ডেকে (তলব) কড়া প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের অন্যতম নিকট প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমার।
দুর্ভাগ্যজনক, দেশটির আচরণ সৎ প্রতিবেশী সুলভ নয়। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে অভিযান চালিয়ে সে দেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচার অভিযান চালিয়ে সে দেশের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্বিচার হত্যাকান্ড চালায়। তাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ নৃশংসতার মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।
আমরা মনে করি, মিয়ানমারের ঘটনার দিকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে এবং সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি ভূমি রক্ষা করা এবং মানুষের জানমাল রক্ষা করা আমাদের সরকারের প্রধান কর্তব্য এবং করণীয় বলে আমরা মনে করি।
আমাদের দেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা যেন না ঘটে এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ গৃহযুদ্ধের পরিণতিতে বাংলাদেশ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়- সেদিকে আমাদের কড়া দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখতে হবে।
মন্তব্য করুন