ভিডিও শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

ঋণ খেলাপের অপসংস্কৃতি

ঋণ খেলাপের অপসংস্কৃতি

সব ধরনের ছাড় দেওয়ার পরও খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বরং দিন দিন তা বাড়ছে, তৈরি হচ্ছে রেকর্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের হাল নাগাদ হিসাব বলছে, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ, এপ্রিল- জুন সময়ে অর্থাৎ ওই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৪ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা।

ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) বেড়েছে ৩৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। আর এক বছরে খেলাপি বেড়েছে ৩০ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে এবং খেলাপি ঋণ উদ্ধারে দুই বছরের রোড ম্যাপ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে এই রোড ম্যাপের মেয়াদ।

এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। এ ছাড়াও ব্যাংক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার মাধ্যমে সীমাতিরিক্ত, বেনামি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট এবং জালিয়াতি-প্রতারণার মাধ্যমে ঋণ বিতরণের পরিমাণ শূন্যে নামাতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বেশি-সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। তাদের পরামর্শ হলো, উচ্চ ঋণ খেলাপি থেকে বাঁচার উপায় একটাই-ঋণ খেলাপি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। সেই ট্রাইবুনালে প্রত্যেক ব্যাংকের শীর্ষ ১০ ঋণ খেলাপির বিচার হবে। উন্নত দেশগুলোর মতো খেলাপিদের সব সম্পদ ক্রোক করা সহ জেলে পাঠাতে হবে।

বিচারে কোনো আপিলের সুযোগ রাখা যাবে না। এ ছাড়া খেলাপি থেকে বাঁচার আর কোনো উপায় নেই।  করোনা মহামারির সময় থেকে ঋণ পরিশোধে নানা ছাড় ও সুবিধা দিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপরও খেলাপি ঋণ বাড়ার অন্যতম কারণ হলো, ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পর্যায়ে থাকা লোকজনের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণেও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ, অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা বাড়ছে, যা কঠোরভাবে রোধ করা প্রয়োজন। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকে দুর্নীতির মাধ্যমে ঋণ বিতরণের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

রাজনৈতিক নেতা, ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঋণগ্রহীতার পারস্পরিক যোগসাজসে দেওয়া হয় এসব ঋণ। কাজেই খেলাপি ঋণ কমাতে হলে ব্যাংকগুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের বিষয়টি অনস্বীকার্য। তবে এ ব্যাপারে ব্যাংক খাতের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বও কম নয়। বস্তুত এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককেই পালন করতে হবে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা।

দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেই আইন শিথিল করে দেওয়া হয়। এতে দুর্নীতিবাজ ব্যাংকারদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি হয়। অথচ ব্যাংকগুলোয় কোথায় কী অনিয়ম হচ্ছে, তা দেখার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। অনিয়ম বন্ধ হয়ে ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে খেলাপি ঋণ কমে আসতে বাধ্য।

হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ এখন বেড়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে, আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে আশাবাদী, ধারণা করছি, ঋণ কমিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপ সহায়ক হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা

রাজশাহীতে নেসকো’র ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানা হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি, বহিরাগতদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলের মৃত্যু

ছেলের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মায়ের মৃত্যু

বগুড়ার ধুনটে পাট মজুদ করায় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা: গুদাম সিলগালা