থেমে নেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল
সড়ক দুর্ঘটনা আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোথাও সড়ক চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা আছে বলে মনে হয় না। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। চলছে অবৈধ যানবাহন। মূল্যবান প্রাণ যাচ্ছে সড়ক-মহাসড়কে। দেশের সড়কপথ যেন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে।
পত্র-পত্রিকার খবরে প্রকাশ শুক্রবার সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে বাস চাপায় অটোরিকশার ৭ যাত্রী, বগুড়ার দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই চালকসহ তিনজন, ফুটপাতে উঠে দিনমজুরকে চাপা দিল ট্রাক, দামুড় হুদায় পিকনিকের বাসের ধাক্কায় বৃদ্ধ, নগরকান্দায় বাস- মোটর সাইকেল সংঘর্ষে একজন, মেহেরপুরে ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশু, সিলেটে ট্রাক্টর-অটোরিক্সার মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইজন, জামালপুরে গাছের সঙ্গে মোটরসাইকেল ধাক্কায় মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারী ও মৌলভীবাজারের রাজনগরে দুই অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
তথ্য- উপাত্ত বলছে কোনোভাবেই রোধ করা যাচ্ছে না সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনা। সদ্য বিদায়ী ২০২৩ সালে সড়ক, রেল ও নৌপথে ৬ হাজার ৯২৯টি যানবাহন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া ১০ হাজার ৯৯৯ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রদত্ত তথ্যে এসব জানা গেছে।
২০১৮ সালে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের আন্দোলনে নেমেছিলেন। তখন বলা হয়েছিল, তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে, কিন্তু গত কয়েক বছরে সড়ক দুর্ঘটনা তো কমেইনি বরং বলা যায় বেড়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এবং এর প্রভাবে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বছরে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা।
মহাসড়কে অপরিকল্পিত স্পিড ব্রেকারও দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, সড়কের পাশে হাটবাজার বসা, চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাব প্রভৃতি কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসতে পারে।
আরও পড়ুনচালকদের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজটি করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী। মহাসড়কে ঘন ঘন বাঁকগুলি সোজা করা দরকার। যত্রতত্র গতিরোধক নির্মাণ রোধে নিতে হবে কার্যকর ব্যবস্থা- অভিযোগ আছে, অনেক পরিবহণ মালিক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেন না। ক্লান্ত-শ্রান্ত চালক গাড়ি চালালে স্বভাবতই তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত দক্ষ চালক এবং ত্রুটি মুক্ত যানবাহন প্রয়োজন।
এর আগে সড়ক দুর্ঘটনার ডজন দুয়েক কারণ চিহ্নিত করা হলেও তা প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছিল। পরিবহণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্বহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে সড়কে মৃত্যু কমছে না। একই সঙ্গে পথচারী ও যানবাহন চালকদের অসচেতনতা, যানবাহনের বেপরোয়া গতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী বলে মনে করেন তারা।
যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের পাশাপাশি পথচারীদেরও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার কোনো বিকল্প নেই।
মন্তব্য করুন