ভিডিও সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার

হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার

হুন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা যেন থামছেই না। সরকারের দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো ব্যাপক নজরদারি, নিয়মিত অভিযান পরিচালনা, নানা প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনে কড়াকড়ি আরোপ করেও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে হুন্ডি বাণিজ্য। দীর্ঘদিন ধরে অর্থ পাচার ব্যক্তি পর্যায়ে থাকলেও কয়েক বছর ধরে ভয়ংকর এ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন বড় প্রতিষ্ঠান।

নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে তারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। হতাশার খবর হলো, কোনো কোনো মামলায় অপরাধের প্রমাণাদিসহ আদালতে চার্জশিট দিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাজার রায়ও দিয়েছেন। তবে নানা কৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে দেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড দুর্বল করে দেওয়া এসব ভয়ংকর অপরাধী।

২০২১ থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭.৮ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, বিভিন্ন মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই হুন্ডির কারবার চলছে দেশব্যাপী। এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডি কারবার করে এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে।

ওই ৫ হাজার এজেন্ট গত বছরের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত ২৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সিআইডি সূত্র বলছেন, সংঘবদ্ধ হুন্ডি চক্র প্রবাসে বাংলাদেশিদের উপার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে তা দেশে না পাঠিয়ে এর সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় পরিশোধ করে। এমএফএস এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, সোনা চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসায়ীসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।

সিআইডির একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরে যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের সবাই এমএফএসের সঙ্গে জড়িত। গ্রেফতারের পর তারা জানিয়েছিলেন, গ্রেফতারের আগে মাত্র চার মাসেই ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার করেছেন তারা। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানি লন্ডারিং মামলার কাক্সিক্ষত ফল না আসার কারণ হলো, আইনি জটিলতা।

তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা, আদালতে আসামি পক্ষের সময় ক্ষেপণ, সমন্বয়ের অভাব ও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ। তবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা উচিত। অপরাধীকে অপরাধী হিসেবেই দেখা উচিত। প্রয়োজনে মানি লন্ডারিং মামলার বিচারের জন্য পৃথক ট্রাইবুনাল গঠন করা উচিত। আদালত সূত্রের তথ্যানুযায়ী, গত ২০ বছরে অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে ৭৫২টি মামলা দায়ের হয়েছে।

আরও পড়ুন

এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে ৩৯৭ মামলায়। ৩৫৫ মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। আর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ১০ মামলায়। দুনিয়ায় যেসব দেশ থেকে বিদেশে ব্যাপক অর্থ পাচার হয় সেই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এ বিড়ম্বনা এড়াতে সরকারের নানা পদক্ষেপ গ্রহণেও মিলছে না কাক্সিক্ষত সুফল।

বিদেশ গমন, চিকিৎসা ব্যয় মেটানো, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, বৈদেশিক কেনাকাটাসহ জীবনযাত্রার নানা ক্ষেত্র এখন হুন্ডির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা লেনদেন সহজীকরণ, ব্যাংকগুলোর নানা সেবামূলক ব্যবস্থাপনা ও হুন্ডি বাণিজ্য রোধ করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী হুন্ডির মাধ্যমে পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল ইন্টিগ্রিটির এর আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে গত এক দশকে বিভিন্ন দেশে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে তার একটি বড় মাধ্যম হুন্ডি।

এর বাইরে বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে ব্যবসার নামে। দেশ থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর কোন পদ্ধতি না থাকায় অবৈধ পথেই টাকা পাচার হয়; আর পাচার হওয়া এ টাকা রাখা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে। অন্য দেশের নাগরিকত্ব নিতেও বিনিয়োগ করা হচ্ছে পাচারের টাকা। অর্থ পাচারের এ ধারা দেশের অর্থনীতির জন্য সংকট ডেকে আনছে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থেই অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে সরকারকে কড়া হতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘প্রধান উপদেষ্টার উপর আমরা আস্থা রাখতে পারি’

জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো ৪ যুবকের বিষপান !

ড. ইউনূস জুন মাসের ৩০ তারিখের পর একদিনও ক্ষমতায় থাকবেন না: প্রেস সচিব

একই অনুষ্ঠানে সম্মাননায় ভূষিত স্বর্ণলতা-বন্নি

প্রথমবার যুক্তরাজ্যে শো’তে ঐশী, ফিরে এসে মধুপুরে

বগুড়ার শেরপুরে দিনের বেলায় সোনার গহনা ও টাকা লুট