ভিডিও

জলবায়ুর দ্রুত ক্ষতি পরিবর্তন রোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা

প্রকাশিত: জুন ০৮, ২০২৪, ০৩:০৯ দুপুর
আপডেট: জুন ০৯, ২০২৪, ১১:৫০ দুপুর
আমাদেরকে ফলো করুন

বিগত পাঁচ বছরের দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দেশসমূহের আবহাওয়ার চালচিত্র অস্বাভাবিকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। পাকিস্তান দেখেছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা, ভারত সম্মুখীন হয়েছে  বায়ু দূষণের, বাংলাদেশকে অস্বাভাবিক গরম-অনাবৃষ্টি-নদীভাঙন, অসময়ে বন্যাসহ নানাবিধ প্রভাব মোকাবিলা করতে হয়েছে।  

ভূ-পৃষ্ঠের আবহাওয়ার বিগত ২৫-৩০ বছরের আবহাওয়ার গড় ফলাফলের মাধ্যমে জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। কোন স্থানের দীর্ঘদিনের বায়ুপ্রবাহ, বাতাসের আদ্রতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, সূর্যের আলোকের বিকিরণের সময়কাল, তাপমাত্রাসহ পরিবর্তনের তত্ত্ব দিয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য উপস্থাপন করে। পৃথিবী সর্বদা গতিশীল। সূর্যের আলো বিকিরণ, অক্ষ-দ্রাঘিমারেখার পরিবর্তন, সূর্যের তুলনায় পৃথিবীর অবস্থান পরিবর্তন  এ সমস্ত কিছুই প্রাকৃতিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলোর অন্যতম। সাম্প্রতিককালের আবহাওয়ার অতিমাত্রায় পরিবর্তন ও জলাবায়ুর তারতম্যের দিকে খেয়াল রাখলে কেবলই ভয়ঙ্কর রূপ ফুটে ওঠে। প্রাকৃতিক কারণে জলবায়ুর পরিবর্তনের চাইতে মানুষের সৃষ্ট কারণে জলবায়ু দ্রুত ও ক্ষতিকরভাবে পরিবর্তিত হয় । 

স্মার্টফোনের আবহাওয়া আপডেটের কারণে মানুষ এখন যেমন বৃষ্টি হওয়ার আগেই জানতে পারছে তেমনি বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণও বুঝতে শিখেছে। পৃথিবীর দুই মেরুর তাপমাত্রা পরিবর্তিত হয়ে বরফ গলছে আর সৃষ্টির ভূ-পৃষ্ঠের দিকে চোখ রাঙাচ্ছে। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে, সমূদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি হচ্ছে। অতিসম্প্রতি বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল দিয়ে বয়ে যাওয়া সিত্রাং, আইলা কিংবা সাম্প্রতিক রিমালে আমাদের মাঝি-মাল্লা, খেটে খাওয়া মজদুরদের মেনে চলতে হচ্ছে মহাবিপৎসংকেত। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ছাড়াও সময় এসেছে নাগরিক পর্যায়ে অতিগুরুত্বপূর্ণ এই জলবায়ু পরিবর্তনে করণীয় বিষয় নিয়ে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধির।

 বাংলাদেশ দুর্যোগপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে সবচাইতে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচ কর্তৃক প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২১’ এর শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সপ্তম। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় কেবলমাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাছ লাগানো কর্মসূচীর ছবি, ভিডিও, বার্তা প্রদানের মতো দোখানো কর্মসূচী না করে সমাজের সুধিজনদের এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। সমাজের জন্য যেমন পরিশুদ্ধি কার্যক্রম চলানো হয় ঠিক তেমনি পরিবেশ রক্ষায় জলবায়ুর দ্রুত ক্ষতিকর পরিবর্তনে আমাদের কার্যকর করণীয় কাজগুলো হতে পারে - 

১.অক্সিজেন বৃদ্ধি: করোনা মহামারিতে আমরা সবচেয়ে বেশি উপলব্ধি করেছি এক সিলিন্ডার অক্সিজেনের মূল্য এবং চাহিদার তুলনায় যোগান ঘাটতি! গাছ রোপণের মাধ্যমে আমাদের বসতির চারপাশের পরিবেশের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির সাথে জলবায়ু রক্ষায় অন্যতম কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব। উত্তরবঙ্গের প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম বগুড়া জেলার আদমদীঘির আলতাদীঘি সম্প্রতি আধুনিকায়ন করা হচ্ছে নানা অবকাঠামো নির্মাণের মাধমে পর্যটক বৃদ্ধির আশায়। প্রাকৃতিক এমন প্রাকৃতিক বনাঞ্চল বিনষ্ট করে, খাদ্যশৃঙ্খল যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি প্রভাব পড়ছে আশেপাশের আবহাওয়ায়। 

২.পরিবেশ দূষণকারী যে কোন গ্যাস নিঃসরণে বাধা ও বিকল্প সৃষ্টি : শহুরে আবাস নির্মাণে অন্যতম অনুসঙ্গ বাড়ি-গাড়ি। কার্বন ডাই অক্সাইড, মনো অক্সাইড, মিথেনসহ নানা ক্ষতিকর গ্যাস অবিরত আমাদের সমান্য প্রয়োজনে আমরাই তৈরি করছি। অথচ, এগুলোই জলবায়ুর ক্ষতিকর পরিবর্তনের মাত্রা দ্রুত করতে বেশি ভূমিকা রাখে। ইলেকট্রনিক্স দ্রব্যাদির বাজেয়াপ্তকালীন যে গ্যাস নির্গত হয় তা মানবদেহসহ যে কোন জীবের জন্য অত্যন্ত হুমকিস্বরূপ। ইটভাটা, কলকারখানা, গাড়িসহ সকল ক্ষেত্রে এসব গ্যাস নিঃসরণ শুধু কমানো হয় অতিসত্বর বন্ধ করে বিকল্প পথ খুঁজতে হবে ।

৩. কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা : গ্রামের ভারসাম্য রক্ষায় এখনও বর্জ্যব্যবস্থাপনা আদি পন্থায় চলছে। কিন্তু, বর্জ্যের ধরণ পরিবর্তিত হয়েছে। শহুরে অপচনশীল নানা বর্জ্য শহর থেকে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে। প্লাস্টিক,পলিথিনকে পেছনে ফেলে রাসায়নিক নিঃসরণ করা নানা বর্জ্যে সয়লাব আমাদের চারাপাশ। জলবায়ু রক্ষায় এসকল বর্জ্যকে ধরণ অনুযায়ী শ্রেণিবিভাজন করে নিঃশেষ বা পুণঃব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হলে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা ইউনিয়ন সকল পর্যায়ে শুধু ময়লা বাণিজ্য নিয়ে হৈ চৈ না করে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। 

৪. জনসচেতনতা সৃষ্টি : শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত সভাকক্ষে বসে সভা সেমিনার করে জনসচেতনতা তৈরির অলিক প্রচেষ্টা হ্রাস করে গঠনমূলক ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণমূলক জনসচেতনা বৃদ্ধির কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। সম্প্রতি প্রাচ্যেরে অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রথি মহারথিদের সভায় পরিবেশ রক্ষায় নানা আলোচনা হলেও জনসচেতনতা কতটুকু সৃষ্টি করা গেছে? 

সুতরাং, জলবায়ুর ক্ষতিকর দ্রুত পরিবর্তন রুখতে কার্যকর পদক্ষেপের প্রথম সোপান হলো জনসম্পৃক্ততাপূর্ণ জনসচেতনতা সৃষ্টি; তাতেই মিলবে মুক্তি। 

 

হাসান মো. শাব্বীর 
সাব-এডিটর, দৈনিক করতোয়া (অনলাইন ) 



মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়
H009
KCS