রবিউল ইসলাম (রবীন)
বাংলাদেশে সরকারি চাকরির জন্য ১৯৭৩ সালের প্রথম প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কোটা ছিল শতভাগ। মুক্তিযোদ্ধা ছাড়া অন্য কারোরই এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল না। ১৯৭৬ সালে মেধা ও বিভাগীয় কোটা ছিল ৪০ শতাংশ, মুত্তিযোদ্ধা ও মহিলা কোটা ছিল ১০ শতাংশ।
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকুরিতে মোট ৫৬ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা (পরে তাঁদের সন্তান ও নাতি-নাতনি) কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। এ ছাড়া ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হয়।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল নয়, সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবি নিয়ে সড়কে নেমে আসে। আন্দোলনের মুখে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরিতে পুরো কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে।
২০২১সালে সেই সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপত্রে মুক্তিযুদ্ধের কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেজ্ঞ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষ থেকে হাইকোটে রীট করেন। সেই বছর ৫ জুন ঐ রিটের রায়ে পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ করে আদালত রায় দেন। এই আদেশের পর থেকে শিক্ষার্থীরা আবার সড়কে নামে।
সরকারি তথ্য অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশের বেকার যুবকের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। এর মধ্যে ১০ শতাংশ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। আর কর্মহীন মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৮২ লাখ। আরেক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিবছর কর্মবাজারে কাজপ্রত্যাশি মানুষ প্রবেশ করে প্রায় ২০ লাখ। এই পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় কেন কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে প্রায় সারা দেশের অজস্র তরুণ-তরুণী রাস্তায় নেমে আসে।
অন্য কোন রাষ্ট্রের কথা জানিনা, বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা করতে হয় মনে হয় সবচাইতে কষ্ট করে। তারপর আবার ৪ বৎসরের কোর্স শেষ করতে সময় লাগে ৭ বছর। এরপরও পড়াশুনা শেষ করে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় চাকরি হয় কম। চাকরির আবেদন থেকে যোগদান পযর্ন্ত তাদের প্রায় ২৪ মাস অপেক্ষা করতে হয়। এরপরও আছে পুলিশি তদন্ত।
তরুণেরা অভিযোগ করে, তাদের নিয়ে কেউ ভাবেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ে এরকম হাজারো তরুণ এসব দেখে, শুনে হতাশ হয়েছে। আর হতাশা থেকে সৃষ্টি হয় প্রতিবাদ। একটা বিষয় মনে করে দেই, ছাত্ররা কিন্তু কোটা বাতিল চায়নি।
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে শিক্ষার্থীর এই কোটা বিরোধী আন্দোলন। হঠাৎ করে গড়ে ওঠা এবারের কোটা বিরোধী আন্দোলন প্রায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আবারো শাহবাগ কেন্দ্রিক এ আন্দোলন দানা বেঁঁধেছে।
এবারে আন্দোলকারীরা আরো বলছেন, পরবর্তি সময়ে সরকার কোটা ব্যবস্থা নিয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে চাইলে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রেখে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া; সংবিধান অনুযায়ী অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা; চাকুরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ বন্ধ করা;, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলিতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।
মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে কোটাকে বিভিন্ন সময়ে সংশোধনী করে কোটা প্রক্রিয়াকে জটিল করা হয়েছে। এর ফলে চাকরিপ্রার্থিরা বিশেষ করে মেধাবী তরুণরা ধরেই নিয়েছে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা সরকারি চাকরি পাবেন না। এসব ক্ষোভ থেকেই কোটা আন্দোলন দানা বেধেছে। এই আন্দোলন শিক্ষিত তরুণদের আন্দোলন।
এর আগেও বাংলাদেশে এর চেয়ে বড় বড় সমস্যার সমাধান হয়েছে। আশা করা যায়, এটিরও সমাধান হবে। আমরা পরাজিত কমই হই। আমরা বীরের জাতি। আর সবশেষে বলতে চাই, এই বিশ্বাস নিয়ে বেচে থাকতে চাই, মেঘ কেটে যাবে। অমবশ্যার অন্ধকার দূর হয়ে দেখা দেবে পূর্নিমার আলো। সমৃদ্ধির জোসনায় চারিদিকে আলোকিত হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, কলামিস্ট
01725-045105
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।