রথযাত্রায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা
বগুড়ায় শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে এক ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। বগুড়া শহরের সেউজগাড়ির আমতলা এলাকায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে রথযাত্রায় অংশ নেওয়া অন্তত ৫ জন মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৫০ জন। গত রোববার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য স্থানে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, উল্লেখিত সময়ে সেউজগাড়ী ইসকন মন্দির থেকে রথযাত্রা বের হয়। রথযাত্রা রওয়ানা হয়ে সেউজগাড়ী আমতলা এলাকায় পৌঁছানোর পর স্টেশন রোডে সড়কের উত্তরধারে যাবার পর রথের ধাতব চূড়াটি সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়া হাইভোল্টেজের বৈদ্যুতিক তারের সংস্পর্শে আসে।
এতে রথের চূড়ায় আগুন ধরে যায় এবং সম্পূর্ণ রথটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পড়ে। রথটি আবারো টেনে নেওয়ার সাথে সাথে রথের সংস্পর্শে থাকা পুণ্যার্থীরা বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসে এবং রথ থেকে ছিটকে পড়তে থাকে। এতে রথের ওপর বসে থাকা এবং নিচে থাকা অন্তত ৫০ জন আহত হন। প্রাণ বাঁচাতে ছোটাছুটিতে পদদলিত হয়ে আহত হয়েছেন অনেকেই।
মারা যাওয়া পাঁচজন হলেন বগুড়া সদরের ছোট বেলঘড়িয়া এলাকার অলোক কুমার সরকার (৪০), শহরের পুরান বগুড়া হিন্দুপাড়ার আতশী রাণী (৪৫), আদমদীঘি উপজেলার কুন্দগ্রামের নরেশ মোহন্ত (৬০), বগুড়া সদরের রঞ্জিত মহন্ত (৫৫) ও সারিয়াকান্দি উপজেলার সাহাপাড়ার জলি রাণী সাহা (৪০)।
আহতদের উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দুই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
যথযাত্রী রূপালী রাণী নামের এক নারী জানান, ‘হঠাৎ আমি দেখতে পাই রথ থেকে অনেকেই লাফাতে শুরু করেছে। এ সময় আমার গা ঝিম ঝিম করতে থাকে। তখন ওপরে তাকিয়ে দেখি রথে আগুন ধরে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, জগন্নাথের রথটি সম্পূর্ণটাই স্টিলের। রূপালী বলেন, ‘ঘটনার সময় শতাধিক মানুষ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যায়, তবে আমি একটু সুস্থ থাকায় রাস্তা থেকে উঠে আমার ছেলেকে খুঁজতে থাকি।
এ সময় দেখতে পাই কারো গা পুড়ে গেছে। কারো মাথা ফেটে গেছে, এরকম একেকজন একেক রকমভাবে আহত হয়েছে। চিৎকার চেচাঁমেচিতে স্থানীয়রা এসে আমাদের উদ্ধার করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছে তারাও উদ্ধার কাজ চালায়।
আরও পড়ুনপত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, আয়োজক কমিটির ভুলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়েছে গত রবিবার।
হিন্দুরীতি অনুযায়ী, প্রতিবছর চন্দ্র মাসের আষাঢ়ের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে শুরু হয় জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আনন্দমুখর পরিবেশে ৯ দিনব্যাপী শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই বিকেল ৩টায় উল্টো রথের বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শেষ হবে।
আমরা মনে করি, সম্পূর্ণ অসতর্কতার কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় কবলিত হয়ে এতগুলো পুণ্যার্থী হতাহত হলেন। প্রিয়জনকে হারিয়ে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ পরিস্থিতি কার গাফলতিতে এতগুলো প্রাণ নিমিষেই হারিয়ে গেল। সেটা খুঁজে বের করতে হবে। ইসকন মন্দির কমিটির ওপরই মূলত এ রথযাত্রার সু-ব্যবস্থা করার দায়দায়িত্ব অর্পিত ছিল।
কিন্তু মানুষ মনে করছে তারা তাদের এ দায়িত্ব পালনে সু-বিবেচনার পরিচয় দেননি। রাস্তার বৈদ্যুতিক তারকে এড়িয়ে কীভাবে রথযাত্রা সু-শৃঙ্খলভাবে নিরাপদে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটাই বিবেচনা করা তাদের প্রথম কর্তব্য ছিল।
আমরা ভয়াবহ এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি আন্তরিক শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। যারা নিহত হয়েছেন মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের স্বর্গবাসী করুন-এ কামনা করছি। এ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর ব্যবস্থাপনা সুন্দর ও নির্ভুল হোক-এটিই প্রত্যাশা।
মন্তব্য করুন