ভিডিও শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

কোটা বৈষম্য থেকে মুক্তি চাই

কোটা বৈষম্য থেকে মুক্তি চাই, ছবি: দৈনিক করতোয়া

২০১৮ সালে বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-ছাত্রী রাজপথে নিজেদের অধিকারের জন্য আন্দোলনে নেমে পড়ে। এর ফলে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর বাংলাদেশ সরকার ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের কারণে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি থেকে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে। গত ৫ জুন মহামান্য হাইকোর্ট সেই কোটা পদ্ধতি বাতিলে জারিকৃত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে।

পরিপত্র বাতিলের কারণে সারা বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীরা আবারো রাজপথে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে নেমেছে। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বৈষম্যের বিরুদ্ধে হাজারো বীর মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে করে দেশকে স্বাধীন করে বৈষম্য দূর করেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনাই ছিলো মৌলিক অধিকার, আইনের শাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা। কোটা সংস্কার আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আন্দোলন।

বৈষম্য দূর করার আন্দোলন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, কেউ হাত-পা হারান, কেউ পঙ্গু হয়ে পড়েন। যুদ্ধে যাওয়ার কারণে রাজাকার এবং পাকিস্তানি বাহিনী তাদের ঘরবাড়ি লুটপাট করে। তাই সামাজিক নিরাপত্তার জন্য ১৯৭২ সালে অনগ্রসর জাতির জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসাবে কোটা পদ্ধতির প্রবর্তন করেছিলো।

যুদ্ধের পর তাদের সঠিক পুনর্বাসন সম্ভব হয়নি সেজন্য যেন মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানসন্ততিদের কথা মাথায় রেখে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়েছিলো। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর তারা কি এখনো অনগ্রসর? এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়।

স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা জীবনে তারা এই কোটার সুবিধা ব্যাবহার করে। শিক্ষা জীবনে ব্যবহার করার পরেও চাকরিতে কেন আবার কোটা সুবিধা পাবে? তারা কি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদেরকে মেধাবী হিসাবে গড়ে তুলতে পারেনি?

এ প্রশ্নগুলো থেকেই যায়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সন্তানাদি নাতি নাতনি তাদের উচিত অনৈতিক সুবিধা ভোগ না করে মেধাবীদের সাথে বীরের মতো লড়াই করা। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে তাদের চেতনা বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখা।

স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ন্যায়, সাম্য এবং মেধার ভিত্তিতে বিনির্মাণ হবে এটিই সকলের কাম্য। কিন্তু বর্তমান ১ম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকুরিতে ৫৬% কোটা বিদ্যামান। এর মধ্যে ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০% জেলা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা বিদ্যামান।

আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির আমলে রাজনৈতিক পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করতে হাজার হাজার মানুষ মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেয়েছেন। কোটা সুবিধা থাকার কারণে রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে হাজার হাজার মানুষ মুক্তিযোদ্ধা সেজে বসে আছেন।

২০২১ সালে ৬ই অক্টোবর প্রথমআলোর এক প্রতিবেদন শিরোনাম "ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ২৫ হাজার ৫০০। প্রতিবেদনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বিএনপির আমলে প্রায় ২২ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছে।

আর আওয়ামী লীগ আমলে (২০০৮ থেকে ২০১৪) গেজেটভুক্ত হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার, যার প্রায় সবই ভুয়া। এই ২২ হাজার ও সাড়ে ১১ হাজার মিলে হয় সাড়ে ৩৩ হাজার। এই ভুয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, তাদের চিহ্নিতই করতে পারেনি সরকার। তবে মন্ত্রী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, তাঁর আমলে আট হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিল করা হয়েছে।

এই হিসাব সত্য হলে এখনো ২৫ হাজার ৫০০ ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। যদিও দুই সপ্তাহ অনেক চেষ্টা করেও আট হাজার মুক্তিযোদ্ধার গেজেট বাতিলের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন সময় সরকারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভুয়া সনদ নেওয়ার অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের ৫ শিক্ষকের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ ছিলো। মেধাবীদের নিয়োগ না দিয়ে এসব অযোগ্যরা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছে।

আরও পড়ুন

কোটা সুবিধা থাকার ফলে দেশে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা দেশে সরকারি চাকরি পাচ্ছে না। পড়াশোনা শেষ করার পর মেধাবীরা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে। গণমাধ্যমের তথ্য মতে প্রতি বিসিএস সাধারণ ক্যাডারে গড়ে মোট ৫০০ জন কর্মকর্তা নিয়োগ পান। ৩৮তম বিসিএসে পরীক্ষার্থী ছিলেন সাড়ে তিন লাখ। নিয়োগ পরীক্ষায়  ২২৫তম নিয়োগ হয় বাকিগুলো কোটার মাধ্যমে।

মেধায় কোন প্রার্থী ২২৬ তম হলেও তার চাকরি নাও হতে পারে কিন্তু কোটা সুবিধা থাকলে ৭০০০ তম হয়েও পেতে পারেন বিসিএস নামক সোনার হরিণ। এর ফলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। তারা দেশ ত্যাগের মতো বড় সিদ্ধান্ত বেছে নিচ্ছে। ফলে আমাদের দেশ মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে। ফলে আমাদের তৈরী ফসলের ফল ভোগ করছে অন্য দেশ আমারা পাচ্ছি আগাছা।

নারীরা আর অনগ্রসর নেই। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্র পুরুষের চেয়ে এগিয়ে আছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় তারা প্রথম সারিতে স্থান পাচ্ছে। যোগাযোগ এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিটি গ্রাম অঞ্চল আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। পিছিয়ে পড়া জেলাগুলোর সাথে বর্তমান যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নয়ন ঘটেছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী দিন দিন এগিয়ো যাচ্ছে।

এসব থেকে বলা যায় যে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য যে সব কোটা ছিল তার সংস্কার প্রয়োজন। ২০১৮ সালেও ছাত্রসমাজ কোটা পদ্ধতি বাতিল চায় নি। তারা চেয়েছিলো সংস্কার। কিন্তু সরকার তাদের দাবি না মেনে পুরা কোটা পদ্ধতি বাতিল করেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা যেহেতু এগিয়ে সেজন্য নারী কোটা বাতিল করা যেতে পারে। আন্দোলনে আসা নারী শিক্ষার্থীরা কিন্তু নারী কোটার বিপক্ষে। তারা স্বীকার করেন নারীরা সমাজে পুরুষের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এমন কি আমাদের দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও একজন নারী।

যেদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী সেদেশে আমরা নারী জাতিকে অনগ্রসর বলতে পারি না। ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর সাথে বাংলাদেশের সকল জনগণের সংখ্যার পরিমাণ বিবেচনা করে তাদের জন্য সামান্য কিছু কোটা রাখা যেতে পারে।

সরকারি সকল চাকরির ক্ষেত্রে  সকল কোটা একত্রে ১০% এর মধ্যে নিয়ে আসা যেতে পারে। কোটা সংস্কারের মাধ্যমে একটি জাতিকে পরিচালনার জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আমরা মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারি। মেধার মূল্যায়নের মধ্যে দিয়ে সোনার বাংলা গড়তে পারি।


লেখক : শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

sohanruhulamin@gmail.com

01792-742460

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা

রাজশাহীতে নেসকো’র ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানা হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি, বহিরাগতদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলের মৃত্যু

ছেলের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মায়ের মৃত্যু

বগুড়ার ধুনটে পাট মজুদ করায় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা: গুদাম সিলগালা