গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট
যে কোনো কারণেই জনজীবনে বিপর্যয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, লোডশেডিং হলে তা জনজীবনে কতটা বিরূপ প্রভাব ফেলে বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে তাপপ্রবাহের কারণে একদিকে দেশে গরম বেড়েছে।
অন্যদিকে, বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদাও। কিন্তু পর্যাপ্ত উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি নেই। আবার কোনো কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র মেরামতের কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজধানীর বাইরে তীব্র হয়েছে লোড শেডিংয়ের মাত্রা। সর্বশেষ ৩০ জুন সরকারি হিসাবে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতি দেড় হাজার মেগাওয়াট।
স্থানীয় গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন বৃদ্ধি না করার সরাসরি কুফল ভোগ করতে শুরু করেছে দেশ। পাশাপাশি আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়েছে। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে সরকারি বেসরকারি বিনিয়োগ এবং ব্যক্তিক খরচ বাড়লেও কাক্সিক্ষত সুফল মিলছে না। বরং জ্বালানি সংকটে শিল্পের চাকা বন্ধ বা ধীর হয়ে যাচ্ছে।
প্রয়োজনীয় গ্যাস না পেয়ে আবাসিক ও পরিবহণ খাতের গ্রাহকরা অন্তহীন ভোগান্তি এবং দিশেহারা পরিস্থিতিতে রয়েছেন। গত দেড়যুগে সাধারণত শীতকালে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি হতো। মূলত শীতে চাহিদা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং সঞ্চালন ও বিতরণে অপচয় বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি তৈরি হতো। তবে গত তিন চার বছরে এ পরিস্থিতি বদলে গেছে। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ঘাটতির কারণ বলা হচ্ছে সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতা, গ্যাস ও তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাসে প্রকৃত লোড শেডিংয়ের পরিমাণ ছাড়িয়েছে ২ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্যানুযায়ী রোববার বিদ্যুতের চাহিদা ছিল সকালে ১৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় ১৫ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। কিন্তু এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে যথাক্রমে ১২ হাজার ৬৪৭ ও ১৩ হাজার ৪৯৩ মেগাওয়াট। তবে সারা দেশে বৃষ্টি হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা কিছুটা কম প্রক্ষেপণ করা হয়েছে এ কয়দিন।
গ্যাসের সংকটের কারণে শিল্প কারখানার উৎপাদেন ধস নেমেছে। গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে। বেড়েছে লোডশেডিং সিএনজি রিফিলিং স্টেশনে গিয়ে গ্যাস না পেয়ে কিংবা কম চাপের কারণে কাঙ্খিত পরিমাণের চেয়ে কম গ্যাস নিয়ে ফিরছে অনেক সিএনজি চালিত গাড়ি। এই গ্যাস পাওয়ার জন্যও ঘন্টার পর ঘন্টা স্টেশনগুলোর সামনে সারিতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে গাড়িগুলোকে।
আরও পড়ুনগ্যাস-সংকটের কারণে কমবেশি ২৪টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র গত কয়েকদিন ধরে সম্পূর্ণ বা আংশিক বন্ধ থাকছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলো এ সরবরাহ ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের আশে পাশে থাকছে। কম গ্যাস সরবরাহের প্রভাব পড়ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে।
রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জেলায় কমবেশি লোড শেডিংয়ের তথ্য জানিয়েছেন গণমাধ্যমগুলি। মুহূর্তে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম। দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে না পারায় এবং জ্বালানি আমদানি করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ও ডলারের জোগান না থাকায় তেল গ্যাস কয়লা আমদানিতে ভাটা পড়েছে। এ অবস্থায় বেশকিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকছে।
এদিকে সারা দেশের শিল্প কারখানায় গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। ২০২০ সালের এপ্রিলের পর এবারই দেশে গ্যাসের সরবরাহ সর্বনিম্ন। সেটি হলো প্রায় তিন হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম হচ্ছে গ্যাসের। ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে আগামী তিন বছরের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি খসড়া পরিকল্পনা হাজির করেছেন টানা তৃতীয় মেয়াদে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে গ্যাস সংকটের কারণে অনেক শিল্প কারখানার উৎপাদন কমেছে তিন ভাগের এক ভাগে। গ্যাস সংকটের কারণে অনেকের জ্বালানি চাহিদার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিজেল ব্যবহার করতে হয়, যাতে উৎপাদন খরচ বাড়ানো যায়। এসব সংকট দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
মন্তব্য করুন