ব্যাংকে ঋণ শৃঙ্খলা ভঙ্গ
দেশের ব্যাংক খাতে দীর্ঘদিন ধরে বিরাজ করছে নানা সমস্যা। দুর্নীতি-অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা তো আছেই, সেই সঙ্গে এ খাতের একটি বড় সমস্যা হলো উচ্চ খেলাপি ঋণ। মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বলা যায়, খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে। খেলাপি ঋণ শুধু ব্যাংক খাতে নয়, দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেই ঝুঁকি তৈরি করছে।
এর ওপর আবার ঋণ খেলাপিদের ঋণের সুদ মওকুফ করা খুবই আপত্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। গত শুক্রবার রাজধানীর এফডিসিতে ছায়া বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, এবারের বাজেটে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার তেমন দিক নির্দেশনা দেখা যায়নি।
অর্থপাচার, দুর্নীতি ও ঋণ খেলাপি চক্র রোধ করা না গেলে এটি সরকারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তিনি আরও বলেন, ‘বড় বড় ঋণ খেলাপিকে ঋণের সুদ মাফ করা হচ্ছে। ঋণ খেলাপিদের ঋণের সুদ মওকুফ করা খুবই আপত্তিকর। সরকারি ব্যাংকগুলো যে ৫০ হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফ করেছে তা খেলাপি ঋণ হিসেবে গণ্য করা উচিত।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ বলা হলেও প্রকৃত পক্ষে এটি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। বাজেট বক্তব্যে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে বললেও তা অর্জিত হবে না। ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘সরকারের দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নির্ভরতা কমিয়ে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার ওপর জোর দেওয়া উচিত। ব্যাংক থেকে নিলে বিনিয়োগকারীরা ঋণ পাবেন না, বিনিয়োগ আরো স্থবির হয়ে পড়বে। অন্যদিকে সঞ্চয় পত্রের মাধ্যমে ঋণ নিলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমবে ও সামাজিক নিরাপত্তা খাত শক্তিশালী হবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের জানুয়ারি-মার্চ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। ফলে গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো হু হু করে বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এছাড়া নানা পদক্ষেপ গ্রহণ ও খেলাপিদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরও কোনো ইতিবাচক ফল আসছে না এর আগে এমন খবরও উঠে এসেছিল। আমরা মনে করি, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আবারও যখন বেড়েছে তখন তা অত্যন্ত উদ্বেগের।
আরও পড়ুনলক্ষণীয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশে আইনের কঠোর বাস্তবায়ন, নজরদারি বৃদ্ধি, শাস্তি প্রদান, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা না দেওয়া, প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণ আদায় এবং দুর্বল ব্যাংক বন্ধ বা অন্য ব্যাংকের সঙ্গ একীভূত করা সহ নানা উদ্যোগ নিয়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনলেও দেশে তা কেন বাড়ছে, এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
ফলে সার্বিক পরিস্থিতি ভাবনার অবকাশ রাখে। এছাড়া আমলে নেওয়া দরকার, অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যারা খেলাপি হচ্ছে, তাদের কোনো শাস্তি এই দেশে হচ্ছে না। যেসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেশি, সেই ব্যাংকও কোনো শাস্তির আওতায় আসছে না।
এ কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা বলতে চাই, অর্থনীতিবিদদের ভাষ্য আমলে নিন। এছাড়া এটাও বিবেচনা নেওয়ার বিকল্প নেই যে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে-তা কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না।
আমরা বলতে চাই, ব্যাংক খাতকে যে কোনো ধরনের অনিয়মের হাত থেকে রক্ষা করার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। আর ঋণ খেলাপি নিয়ে যে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে তার নিরসন অপরিহার্য। আমরা মনে করি সার্বিক পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে সুষ্ঠু পরিচালনা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশের ব্যাংকের উন্নয়ন জরুরি।
মন্তব্য করুন