ভিডিও শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে চাকরিজীবীরা মানসিক চাপে

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে চাকরিজীবীরা মানসিক চাপে--ছবি: দৈনিক করতোয়া

মিলছে না আয় ব্যয়ের হিসাব। ভিক্ষা করতে পারে না, কারো কাছে হাত পাততে বা চাইতে পারে না, না খেয়ে থাকলে কাউকে বলতে পারে না। চক্ষু লজ্জা আছে এমন শিক্ষিত স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী যাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দেশে নিত্য পণ্যের বাজার অস্থিরতা ও অপ্রতিরোধ্য দ্রব্যমূল্যের দাম।

মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে ব্যর্থ যখন সাধারণ ভোক্তারা এসময় স্বল্প আয়ের শিক্ষিত মানুষগুলো দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ এই উর্র্ধ্বগতির কারণে পারিবারিক প্রয়োজন মিটিয়ে সম্মান নিয়ে সংসার চালাতে ব্যর্থ হয়ে পড়েছে। বাজারে গিয়ে আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে মানসিক চাপে ভুগছেন। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

মাছ, চাল, ডাল, গোস্ত ডিমের সঙ্গে চড়া সবজির দামও। দেশে সকল প্রকার চলমান মিডিয়া থেকে শুরু করে এমন কোন সংবাদ মাধ্যম নাই সেখানে দেশের এই ভয়াবহ বাজার পরিস্থিতি নিয়ে খবর, প্রতিবেদন, সভা, সেমিনার, টিকটক, নাটক, কৌতুক জন সম্মুখে প্রচার প্রচারণা হচ্ছে না।

এমতাবস্থায় বে-সরকারি ও সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৈষম্য আকাশ পাতাল ফারাক। নিম্ন আয়ের চাকরিজীবীরা এই বাজার পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে নাকাল বা বেহাল দুরবস্থায় দিনাতিপাত করছেন।

মূল্যস্ফীতি তথা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে মানসিক চাপে ভুগতে ভুগতে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অপরদিকে সরকারি চাকরিজীবীগণ এমন পরিস্থিতি স্বাভাবিকভাবে মানিয়ে চলছে। এই সমস্ত এনজিও কর্মী পরিবারের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়ে কেউ কেউ চাকরির পরে অতিরিক্ত সময় দিন মজুরের মত পেশায় নিজেকে যেতে বাধ্য করছে। একই সাথে এতে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

সরকারি চাকরিজীবীরা যে বাজার করে এনজিও কর্মী বা অন্যান্যদেরকেও বাজার করতে হয় একই বাজারে। এমতাবস্থায় ছেলে/মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার খরচ বহন/চালানো অত্যন্ত কষ্টকর বা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ছে। এদেশে অসংখ্য এনজিও কর্মী আছে এমএ পাশ করে মাত্র ১০-১২ হাজার টাকা সর্বোচ্চ বেতনে ৮-১২ ঘন্টা তাদের চাকরি করতে হচ্ছে। বেকার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে তারা জীবন জীবিকার তাগিদে এ পেশায় তাদের নিয়োজিত করছে।

অপরদিকে এক শ্রেণীর অসাধু বেসরকারি মালিক শ্রেণী তাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শ্রমিক বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। অল্প ইনভেষ্টে দক্ষ শিক্ষিত শ্রমিক দিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান একটাই তাদের লক্ষ্য। কর্মীরা বাঁচলো কি মরলো দেখার কেউ নাই। একজন কর্মীর সকালে চাকরি থাকলেও বিকালে থাকবে কি না তার কোন গ্যারান্টি নাই। বিবিএস এর (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) প্রতিবেদন অনুযায়ী বর্তমানে দেশে ২৫ লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি প্রায় শিক্ষিত বেকার রয়েছে।

দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ৭ জুলাই/২৪ সম্পাদকীয় কলাম শিরোনাম ‘‘মরিচের ঝাল ও পেঁয়াজের ঝাঁজ। কোথায় গিয়ে থামবে বাজারের উর্ধ্বগতি’’। কাঁচা মরিচের ঝাল ও পেঁয়াজের ঝাঁজে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। শুকনো মরিচের দাম বেশি থাকায় অনেকে কাঁচা মরিচে ভরসা করতো। সেই ১ কেজি কাঁচা মরিচের দাম যখন ৩০০ টাকা ছুঁই ছুঁই করছে। তখন তারা নিরুপায়। একই কথা পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও। চালের দামও বাড়ছে।

সবজির দামও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ার জন্য সাম্প্রতিক ভারী বৃষ্টি ও মৌসুমি বন্যার দোহাই দিচ্ছেন। মুক্ত বাজার অর্থনীতি মানে যা খুশি তা করা নয়। বাজারের উপর সরকারের যে তদারকি করার কথা বর্তমানে তা পুরোপুরি অনুপস্থিত। সরকারের নীতি নির্ধারকদের অজানা নয় যে, নিত্যপণ্যের ক্রমাগত দাম বেড়ে যাওয়ায় দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষেরা খুব কষ্টে আছেন। সারাদেশে ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মধ্যে স্বল্প মূল্যে সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চাল বিক্রি করছে (টিসিবি)। নিম্ন আয়ের এক কোটি উপকারভোগী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে এ পণ্য পাবেন শুধুমাত্র কার্ডধারী পরিবার যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য।

৬ জুলাই/২৪ দৈনিক প্রথম আলো ৬ষ্ঠ পাতা শিরোনাম- ‘‘গরিব মানুষ বাঁচপো কি করে’’ বাগেরহাট প্রতিনিধি লিখেছেন- দাম বাড়ায় নাভিশ্বাস অবস্থা বাজারে কম বেশি প্রায় সব ক্রেতার। কারণ সপ্তাহের ব্যবধানে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে কয়েক দফায়। বেসরকারি চাকরিজীবী উপজেলা সদরের এক বাসিন্দা বলেন ‘‘মাসে যে, বেতন তার চেয়ে এখন খরচ বেশি।

আরও পড়ুন

ঘর ভাড়া বিদ্যুৎ বিল গ্যাস বিল যাতায়াত খরচ দিয়ে দেখা যায় মাসের খাওয়া খরচ পরিবারের ঔষধ ও ছেলে মেয়েদেরকে পড়াশোনা খরচ আর নেই। সবকিছুর দামই বাড়তি। এই নাভিশ্বাস অবস্থা বাজারে কম-বেশি প্রায় সব ক্রেতার।

দৈনিক প্রথম আলোর ১ম পাতা ১ম কলামে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালদের অধ্যাপক ও ইতিহাসবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেছেন ১৯৭২ সালের ৯মে রাজশাহীতে মাদ্রাসা ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন আমি কি চাই? পাঁচবার বলেছিলেন আমি কী চাই? সামগ্রিকভাবে একটি কথাই বলেছিলেন। বাংলার মানুষ খেতে পারবে পরতে পারবে, মুক্ত হাওয়ায় বসবাস করবে, প্রাণ খুলে হাসতে পারবে................।

এতো লেখালেখি জানাজানির পরেও আমাদের দেশের সরকারি রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনাকারীগণ কেন জানি না নিরবতা পালন করছেন। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে। সরকারি অপরাধ দমন বিভাগগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাতারাতি দেশের সম্পদ লুটপাট করে খাচ্ছে, এক শ্রেণীর অসাধু চক্র। দুঃখজনক হলেও ছাগল কেলেংকারির মত গড ফাদাররা বা মদদদাতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

রাষ্ট্রযন্ত্র এমন বিকল অকেজো হয়ে পড়লে বা জেগে জেগে ঘুমালে দেশের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে যা দেশের জনগণ মনে করছেন। লাখ লাখ শিক্ষিত এনজিও কর্মিদের প্রাণের আকুল আবেদন মাননীয় সুযোগ্য প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের নিকটে তিনি যেন এহেন পরিস্থিতি নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।

এনজিও কর্মীদের বেতনের বৈষম্য দূর করে বাজার ব্যবস্থা তদারকি/মনিটরিং কমিটিকে নিত্যপণ্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার আহবান জানান। তাতে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। সরকারের অগ্রযাত্রার পথ আরো সুন্দর হবে।

লেখক : একজন উন্নয়ন কর্মী

alokitodesh@gmail.com

01716-961468

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আন্দোলনে যাচ্ছেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা

রাজশাহীতে নেসকো’র ভৌতিক বিল বন্ধসহ নানা হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শীতকালীন ছুটি, বহিরাগতদের প্রবেশে বিধি-নিষেধ

টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাবা-ছেলের মৃত্যু

ছেলের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে মায়ের মৃত্যু

বগুড়ার ধুনটে পাট মজুদ করায় ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা: গুদাম সিলগালা