কালো টাকা সাদা নয়
বিগত আওয়ামী সরকার বারংবার অবৈধপথে উপার্জিত কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে এবং তা বিদেশে পাচার করার পথ সুগম করেছিল। ফলে বাংলাদেশ থেকে লক্ষ কোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে।
কালো টাকা সাদা করার বিষয়টি দুর্নীতির আওতায় পড়ে। কেউ কালো টাকা অর্জন করবে এবং পরে তা সাদা করার ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। তাহলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত উদ্যোগ, এত কথা বলা বা দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রয়োজন রয়েছে কি? অর্থনীতির সংজ্ঞায় খারাপ অর্থ যেমন ভালো অর্থকে দূরে সরিয়ে ফেলে তেমনি কালো অর্থও বাজেটের লক্ষ্য অর্জনকে ব্যাহত করে।
বাংলাদেশে কালো টাকাকে সাদা করার সুযোগ দেয়ার জন্য সব সময়ই অতি আগ্রহী। বলা চলে এটা এক ধরনের রাজনৈতিক আপোস। জানা গেছে, বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে বার বার এই সুযোগ দেয়া হলেও কালা টাকা সাদা হয়েছে খুব সামান্যই। কালো টাকার বড় অংশই থেকে গেছে অপ্রদর্শিত অবস্থায়। দেশবাসী চায় কালো টাকা সাদা করা নয়, বরং কালো টাকার উৎস বন্ধ করাই হোক-সরকারের মূল কাজ।
বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিয়েছে অর্থ পাচারের ঘটনা। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে বিদেশে। এ পাচার দেশীয় মুদ্রার মূল্যহ্রাসে ভূমিকা রাখছে, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সৃষ্টি করছে। অসৎ আমলা, ব্যবসায়ী এবং অসৎ রাজনীতিকদের অনেকেই প্রতিবছর অর্থ পাচার করে বিদেশি ব্যাংকে তা জমাচ্ছে অথবা সম্পত্তির মালিক হচ্ছে।
যে অর্থ দেশের শিল্পায়ন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যবহার করা যেত তা পাচার হয়ে যাওয়ায় অমিত সম্ভাবনা থেকে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, আওয়ামী সরকারের আমলে পাস হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। যেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে একজন বাংলাদেশি নাগরিক কালো টাকা সাদা করতে পারবেন।
তাদের আয়ের উৎস সম্পর্কেও কোনো প্রশ্ন করা হবে না। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থের মোড়কে কালো টাকা সাদা করার সুযোগের সমালোচনা করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) থেকে শুরু করে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতিবিদরা।
আরও পড়ুনতখন তারা কালো টাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ বাতিলের আহবান জানায়। কিন্তু নানা সমালোচনার পরও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রেখেই জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়। এই আইনের বিরোধিতা করে তখন অর্থনীতিবিদরা বলেছিলেন, মাত্র ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার এমন সুবিধা সৎ ও বৈধ আয়ের করদাতাকে নিরুৎসাহিত করার সংস্কৃতি গড়ে তুলবে।
একই সঙ্গে, এই সুযোগ অন্তর্ভূক্ত দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার অঙ্গীকারকে প্রহসনে পরিণত করেছে।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে পৃথিবীর নানা প্রান্তে এসব কালো টাকা দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দুর্নীতিবাজদের বেগমপাড়া। সাহেবরা দেশে থাকলেও বেগম ও সন্তানরা থাকেন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর নানা প্রান্তে। তারা টাকা পাচার করে সেখানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন।
অতি মাত্রায় সহজ-সরল এদেশের মানুষ। এমন মানুষের কাছে সাধারণত, একটি জাতীয় বাজেটে অনেক পণ্য রয়েছে যার দাম বাড়লে বা কমলে কিছুই আসে-যায় না। কিন্তু তারা যেসব পণ্যের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে সেগুলোর দাম যদি বাড়ে তখন সাধারণ মানুষ পড়ে মহাসংকটে। তখন আর কিছুই করার থাকে না।
তাই প্রয়োজন সর্বস্তরে জবাবদিহিতার মনোভাব। যার প্রয়োজন আজ সবচেয়ে বেশি। সুশাসন নিশ্চিত হলে অর্থপাচার করে পার-পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। এ ব্যাপারে নজরদারিও বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য করুন