নিজের আলোয় ডেস্ক : ইযুর চুল নিয়ে বন্ধু মহলের সবাই খুব প্রশংসা করতেন। একবার তার বাসায় এক বন্ধু বেড়াতে এসে টেবিলে রাখা বোতলে নানা প্রাকৃতিক উপাদানসহ তেল দেখতে পান। ইযু জানান, এই তেলের রেসিপি বংশানুক্রমে তার নানীর কাছ থেকে পাওয়া। প্রায় একশো বছর পুরানো রেসিপির এই তেল তাদের পরিবারের সবাই ব্যবহার করেন।
ইযুর বন্ধু তখন নিজের ব্যবহারের জন্য তার কাছ থেকে তেল নিয়ে যান। এরপরই ইযুর জীবনের মোড়টা কিছুটা পাল্টে যায়। দেড় মাস তেল ব্যবহার করার পর সেই বন্ধু তার নিজের অনলাইন ব্যবসার পেইজে তেলের রিভিউ দেন। সেখানে থেকে আরো কয়েকজন অনুপ্রাণিত হন এই তেল নিতে। তখন বন্ধুর পরামর্শে হুট করেই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে তেল বানাতে শুরু করেন সাজিয়া হাসান ইযু। এরপরের গল্পটা তো সবারই জানা।
সময়টা ২০১২ সাল। সাজিয়া হাসান ইযু তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড এন্ড নিউট্রিশন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। দেশে যখন অনলাইন ব্যবসা মাত্র পরিচিত হতে শুরু করেছে তখনই জন্ম হয় সিক্রেট হেয়ার অয়েল 'রূপাঞ্জেলস সিক্রেট' এর পথচলা। যার প্রতিষ্ঠাতা ইযু নিজেই।
ইযু জানান, প্রথম মাসে তাদের তেল বিক্রি হয়েছিল মাত্র তিন বোতল। অনলাইনে কাউকে ভরসা করাটা খুব কঠিন ছিল সে সময়ে। তবু পরিচিত মানুষের রিকমেন্ডেশনে গ্রাহক বাড়তে থাকে। এতদিনের বিশ্বস্ততায় এখন দৈনিক ৪০-৫০ বোতল তেল ডেলিভারি হয়।
সফল ব্যবসায়ীর পাশাপাশি দুই সন্তানেরও মা- ইযু। বড়টির বয়স পাঁচ বছর, আরেকজনের বয়স তিন। ইযু জানান, তার প্রথম সন্তান হওয়ার দিন সকালে ডাক্তারের কাছে চেকআপ করাতে গেলে ডাক্তার তাকে ইমার্জেন্সি হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেছিলেন। তখন বাসায় এসে আগে তেলের সব অর্ডারের প্যাকেট রেডি করে হাসপাতালে যাওয়ার পথে কুরিয়ার কোম্পানিকে দিয়ে গিয়েছিলেন। বাচ্চা হওয়ার পরদিন থেকেই তাকে অনলাইনে সব কাজ সামলাতে শুরু করেছিলেন। সে সময় তাকে দেখে সবাই বেশ অবাক হয়েছিল।
দুই সন্তান আয়েশা ও আইযা তাদের মায়ের কাজ নিয়ে খুবই গর্বিত। তারাও বড় হয়ে মায়ের মতো হতে চায় বলে জানান ইযু। তেল বানানোর মূল কাজ দশ বছর যাবত ইযু একাই করেন। বর্তমানে তার সাথে কাজ করেন আরো ৬ জন নারী ইযুর স্বামী তার সব কাজে সাহায্য করেন সবসময়। পরিবারের সবার সমর্থন তার জন্য অনেক বড় পাওয়া বলে কৃতজ্ঞতার সাথেই স্বীকার করেন ইযু।
১,২০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা রূপাঞ্জেলস সিক্রেটের বার্ষিক আয় এখন ১৫ লাখ টাকার উপরে। হেয়ার অয়েলের পাশাপাশি এখন ফেস স্ক্রাবও বানাচ্ছেন ইযু। উদ্যমী এ নারী ভবিষ্যতে রূপচর্চার জন্য এমন সব প্রাকৃতিক পণ্য উদ্ভাবন করতে চান- যেগুলো একসাথে অনেক সমস্যা দূর করতে পারবে। সাজিয়া হাসান ইযু তার কাজের মাধ্যমে অসহায়-প্রান্তিক নারীদের বড় কর্মক্ষেত্র তৈরির স্বপ্নও দেখেন।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।