এন্ডোমেট্রিওসিস এবং বন্ধ্যাত্ব

প্রকাশিত: জানুয়ারী ১০, ২০২৩, ০৫:২৯ বিকাল
আপডেট: জানুয়ারী ১০, ২০২৩, ০৫:২৯ বিকাল
আমাদেরকে ফলো করুন

প্রায় ছয় বছরের সংসার রুমার(ছদ্মনাম)। প্রথম এক বছর পার হতে না হতেই বাচ্চার জন্য আত্মীয়-স্বজনের চাপ, মা-শাশুড়ীর আবদার। কিন্তু দিন গড়িয়ে মাস যায়, মাস গড়িয়ে বছর। সুখবর দিতে পারে না রুমা। কানাঘুষা করতে থাকে সবাই, রুমার পিরিয়ডের ব্যাথাই নাকি এর জন্য দায়ী। গাইনেকোলজিস্টের স্মরণাপন্ন হয় রুমা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে উনিও বুঝিয়ে বলেন,এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণেই তার সন্তান ধারণে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। 

সন্তান ধারণে সক্ষম মহিলাদের ১০-১৫% এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত। বন্ধ্যাত্বে ভোগা মহিলাদের মধ্যে এই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা বর্তমানে প্রায় ২৫-৫০%। অন্যদিক থেকে বললে বলা যায়, এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত মহিলাদের ৩০-৫০% বন্ধ্যাত্বের জটিলতায় ভোগে। 

এন্ডোমেট্রিওসিসে বন্ধ্যাত্ব কেন হয়? 

প্রকৃতপক্ষে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন যে, ঠিক কোন কেসে কি কারণে বন্ধ্যাত্ব হয়। তবে এন্ডোমেট্রিওসিসে মূল যে সমস্যা হয় তা হল জননাঙ্গের বিভিন্ন অংশের স্বাভাবিক এনাটমি বা গঠনতন্ত্রের পরিবর্তন। ইতোপূর্বের আলোচনায় আমরা বলেছি যে, এন্ডোমেট্রিওসিসে এক্টোপিক টিস্যু জমা হয় জননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে। ফলে এক অঙ্গের সাথে আরেক অঙ্গ জড়িয়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গাংশ তার স্বাভাবিক গঠন এবং অবস্থান থেকে সরে যায়। এই অবস্থানগত অস্বাভাবিকতার কারণে ডিম্বক নিঃসরণ হওয়ার পর ডিম্বনালীতে প্রবেশে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়। অনেক সময় দেখা যায় ডিম্বনালী ডিম্বাশয় থেকে অনেক দুরে জরায়ুর পেছন দিকে বা অন্য কোন স্থানে আটকে আছে। ফলে ডিম্বক ডিম্বনালীতে প্রবেশ করতেই পারে না। আবার কোনভাবে ডিম্বনালীতে প্রবেশ করতে পারলেও গঠনগত পরিবর্তনের কারণে জায়গামতো পৌঁছাতে পারে না। 

অপরদিকে, এন্ডোমেট্রিওসিস যেহেতু একটি হরমোন প্রভাবিত প্রদাহজনিত রোগ, ফলে প্রদাহ থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কারণে জরায়ু এবং ডিম্বনালীতে শুক্রাণুর স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হয়। যদিওবা কোনভাবে ডিম্বানু এবং শুক্রাণু মিলিত হয়ে ভ্রূণ তৈরি করে, উক্ত ভ্রূণের গতিও বাঁধাগ্রস্থ হয় ডিম্বনালী এবং জরায়ুর স্বাভাবিক সংকোচন ব্যাহত হওয়ার কারণে। এমনকি ভ্রূণের জন্য জরায়ু স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি করতে পারেনা, ফলে স্বাভাবিক ইমপ্ল্যানটেশনও হয় না অনেক ক্ষেত্রে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডিম্বাশয়ে এন্ডোমেট্রিওমা বা চকলেট সিস্ট হয়। ফলে স্বাভাবিক ডিম্বক নিঃসরণও হয় না ঠিকমতো। 

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে, সব মিলিয়ে এন্ডোমেট্রিওসিস এবং বন্ধ্যাত্ব একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। যদিও একথা হলফ করে বলা যায় না যে, এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে বন্ধ্যাত্ব অবশ্যম্ভাবী। তবে এটা ঠিক যে, এন্ডোমেট্রিওসিসের মাত্রা যতো বাড়ে, সন্তান ধারণের জটিলতা ততো বাড়তে থাকে।
করণীয় কি?

এন্ডোমেট্রিসিস যতো দ্রুত ডায়াগনোসিস হয় ততোই ভালো। দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত। রোগের মাত্রাভেদে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে, ননহরমোনাল থেকে শুরু করে হরমোনাল কিংবা সার্জিক্যাল চিকিৎসা। সার্জিক্যাল চিকিৎসার মধ্যে ল্যাপারোস্কপি উত্তম। এতে একইসাথে এন্ডোমেট্রিওসিসের  মাত্রা নির্ধারণের পাশাপাশি জননতন্ত্রের গঠনগত স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এছাড়াও রয়েছে  এআরটি (Assisted Reproductive Technology)  ডিম্বক নিঃসরণের জন্য সুপারওভুলেশান নামক মেডিকেল চিকিৎসার সাথে আইইউআই (ইন্ট্রাইউটেরাইন ইনসেমিনেশান) করা যেতে পারে। আরো বেশী জটিলতায় আইভিএফ ( ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশান) করা যেতে পারে। 

মোট কথা, এন্ডোমেট্রিওসিসের নানান জটিলতা যেমন রয়েছে, তেমনি একে পাশ কাটিয়ে বন্ধ্যাত্বকে জয় করার জন্যও আবিষ্কৃত হয়েছে চিকিৎসার নানান উপায়। শুধু প্রয়োজন সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় এবং তার চিকিৎসা গ্রহণ করা। এর আগেও বলেছি, এখনও বলছি, সঠিক সময়ে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা ছাড়া এ রোগের জটিলতা থেকে পরিত্রাণের অন্য কোন উপায় নেই। 
সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে চিকিৎসা গ্রহণ করুন। এন্ডোমেট্রিওসিসকে জয় করে মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহণ করুন। 

ডা. ফাহমিদা শিরীন নীলা
এমবিবিএস; বিসিএস(স্বাস্থ্য); এফসিপিএস(গাইনী এন্ড অবস্)
ফিগো ফেলো(ইটালী), গাইনী কনসালটেন্ট,
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বগুড়া। 

 

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়