স্বাস্থ্যকথা ডেস্ক : ব্যাক পেইন শব্দটি আমরা আজকাল বেশ শুনতে পাই। এই ব্যাক পেইন বা পিঠ ব্যথা সাধারণত নিচের পিঠের পেশি, লিগামেন্ট, মেরুদন্ড, কশেরুকার সমস্যা থেকে তৈরি হয়। পিঠ ব্যথার কারণগুলোর ভেতর সবচেয়ে বেশি থাকে পিঠের পেশিতে চাপ পড়া এবং পিঠের কাঠামোগত সমস্যা।
চলুন জেনে নেওয়া যাক পিঠ ব্যথা বা ব্যাকপেইনের কারণগুলো কী কী।
পিঠের পেশিতে চাপ বা স্ট্রেইন : পিঠের পেশিতে অতিরিক্ত চাপ, ভারী বস্তু ভুলভাবে উত্তোলন এবং ভুল ভঙ্গিতে শরীরের আকস্মিক নড়াচড়াতে প্রায়ই পিঠে ব্যথা করে।
কাঠামোগত সমস্যা : কশেরুকা হলো মেরুদন্ডকে ঘিরে থাকা চাকতি আকারের হাড়। এই হাড়গুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত। প্রতিটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানগুলোতে ডিস্ক নামক টিস্যু থাকে এবং কশেরুকাগুলোকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে। এই ডিস্কে আঘাত পিঠে ব্যথার সাধারণ কারণ।
কখনো কখনো এই ডিস্কগুলো ফুলে যেতে পারে, বেরিয়ে পড়তে পারে (হার্নিওয়েট হওয়া), অথবা ফেটে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মেরুদন্ডের স্নায়ুতে চাপ পড়ে। এগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি ব্যথা হয় হার্নিওয়েটেড ডিস্ক বা ডিস্কগুলো কশেরুকা থেকে বেরিয়ে গেলে। বেরিয়ে পড়া ডিস্ক স্নায়ুতে চাপ দিলে পিঠ বা কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথা, শিরশিরে অনুভুতি এবং অল্প থেকে প্রচন্ড পরিমাণ ব্যথা হতে পারে।
বাত বা আর্থ্রাইটিস : স্পাইনাল অস্টিওআর্থারাইটিস পিঠে ব্যথার একটি সম্ভাব্য কারণ। এই রোগে আপনার পিঠের নিচের জয়েন্টগুলোর কারটিলেজের অবনতি ঘটে যার কারণে মেরুদন্ড চেপে আসতে পারে বা সংকীর্ণ হতে পারে, যা ব্যথার কারণ।
অস্টিওপোরোসিস : হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস এবং হাড় পাতলা হয়ে যাওয়াকে অস্টিওপোরোসিস বলা হয়। এতে আপনার কশেরুকার ছোটো ছোটো ফাটল হতে পারে যেগুলো গুরুতর ব্যথার কারণ।
পিঠে ব্যথার অন্যান্য কারণ : ওপরে দেওয়া কারণগুলোর বাইরেও আরো কিছু কারণেও ব্যাকপেইন বা পিঠে ব্যথা হতে পারে।
ডিজেনারেটিভ স্পন্ডিলোলিস্থেসিস : একটি কশেরুকা তার স্থান থেকে সরে গিয়ে কাছাকাছি একটি কশেরুকার দিকে চলে যাওয়া।
কাউডা ইকুইনা সিন্ড্রোম : মেরুদন্ডের নিচের অংশে স্নায়ুর কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া। মেরুদন্ডের ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। মেরুদন্ডে ক্যান্সার বা টিউমার। কিডনি সংক্রমণ বা কিডনি পাথর।
ব্যাকপেইন যন্ত্রণাদায়ক এবং এটি কাজের ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। তাই আপনি যদি অনেকদিন ধরে, ঘনঘন পিঠের ব্যথা অনুভব করেন তবে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করতে ভুলবেন না।
পিঠের ব্যথা কমানোর উপায় : প্রথমে খাদ্যতালিকার দিকে নজর দিই। কিছু খাবার পিঠের ব্যথা কমায়, ওগুলো বেশি খেতে হবে। আবার কিছু খাবার পিঠের ব্যথা বাড়ায়, ওগুলো বাদ দেওয়াই ভালো। কিছু সামুদ্রিক মাছ খেলে উপকার পাওয়া যায়। সয়া শস্যজাত খাবার, তিসি, বাদাম, সবুজ চা, আদা, চেরি ফল প্রভৃতি পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। দিনের খাদ্যতালিকায় এসব রাখলে ব্যথার উপশম হয়। অন্যদিকে প্রক্রিয়াজাত (প্রসেসড), ভাজাপোড়া খাবার, মার্জারিন নামে পরিচিত প্রাণিজ ও উদ্ভিদের চর্বি থেকে তৈরি মাখন, অতিরিক্ত মাত্রায় সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্সফ্যাটের খাবার পিঠের ব্যথা বাড়ায়। এগুলো ওজন বাড়ায় এবং হার্টের জন্যও ক্ষতিকর।
ভিটামিন ডির অভাবে পিঠের ব্যথা হয়। তাই শরীরে একটু রোদ লাগাতে হবে। কারণ, ভিটামিন ডি হলো ‘সৌর’ ভিটামিন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫ থেকে ৫২ বছর বয়সীদের মধ্যে যাঁরা দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথায় ভুগছেন, তাদের ৮০ শতাংশের এই ভিটামিনের অভাব রয়েছে। প্যান্টের পেছনের পকেটে পেট ফোলা মানিব্যাগ নিয়ে সারা দিন অফিসের চেয়ারে বসে কাটালে পিঠের ব্যথা হতে পারে। কারণ, এটা মেরুদন্ডে খোঁচা দেয় এবং নিতম্বের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুতে চাপ দেয়। এর ফলে ওই স্নায়ুর প্রদাহ হতে পারে। ছেলেদের এই সমস্যা এত বেশি যে এ ধরনের ব্যথা মানিব্যাগ নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত। প্যারাসিটামল বা এই জাতীয় ব্যথার ওষুধের চেয়ে গরম সেঁক বেশি উপকারী।
গরম পানির ব্যাগ পিঠ বা কোমরের সংস্পর্শে রেখে রাতে ঘুমালে বেশ আরাম পাওয়া যায়। একধরনের গরম সেঁক দেওয়ার ব্যাগ কোমরে-পিঠে বেঁধে রাখা যায়। অফিসে কাজের সময় পায়ের নিচে একটি ছোট পিঁড়ি রাখলে সুফল আসে। ব্যথা সারে। হাঁটু যেন নিতম্বের অনুভূমিক তলের একটু ওপরে থাকে, সেটা দেখতে হবে। এতে পিঠের নিচের দিকে চাপ কমে এবং পিঠের ব্যথার উপশম হয়।
সৌজন্যে
ডাঃ আবুল ফয়সাল মোঃ নুরুদ্দীন চৌধুরী
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস(মেডিসিন),
মেম্বার, এ.সি.পি (ইউ এস এ)
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।