স্বাস্থ্যকথা ডেস্ক : মস্তিষ্কের অনেক অসুখের একটি উপসর্গ হচ্ছে ডিমেনশিয়া। এর স্বাভাবিক ও সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়া বা ভুলে যাওয়া। কেউ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হলে তার পক্ষে অতীতের চেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনা মনে রাখা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায়।
ডিমেনশিয়ার ধরন : কীভাবে বোঝা যাবে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষটি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। যেসব উপসর্গ আছে তার মধ্যে রয়েছে আচরণের পরিবর্তন, মেজাজ ও ব্যক্তিত্ব, পরিচিত জায়গাতেও হারিয়ে যাওয়া অথবা কারও সঙ্গে আলাপ করার সময় সঠিক শব্দটি খুঁজে না পাওয়া। এটা এমন একপর্যায়ে গিয়েও পৌঁছাতে পারে যে, তিনি খেয়েছেন কিনা সেটাও তিনি মনে করতে পারবেন না। চাবি কোথায় রেখেছেন, চেকে সই করেছেন কি না, এসব তারা সহজেই ভুলে যান।
এমন কি তারা কথাও গুছিয়ে বলতে পারেন না। কথা বলার সময় কোন শব্দের পর কোন শব্দ ব্যবহার করবেন কিংবা একটা বাক্যের পর পরের বাক্যে কী বলবেন, সেসব তারা মেলাতে পারেন না।
ডিমেনশিয়ার নানা রকমের প্রকারভেদ রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় আলঝেইমার্সজনিত ডিমেনশিয়া যা বংশগত।
আরও কিছু ডিমেনশিয়ার মধ্যে রয়েছে ভাসকুলার ডিমেনশিয়া, লিউই বডি ডিমেনশিয়া, ফ্রন্টো টেম্পোরাল ডিমেনশিয়া এবং পারকিনসন্সজনিত ডিমেনশিয়া।
কেন ভুলে যাই : মানুষ কেন ভুলে যায় এই প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানীরা জানান মস্তিষ্কের একটি নির্দিষ্ট জায়গা, যা স্মৃতির প্রবেশপথ তাকে বলা হয় হিপ্পোক্যাম্পাস। এই এন্ট্রি পয়েন্টের ওপরেই রোগটি আক্রমণ করে। এর অর্থ হচ্ছে ডিমেনশিয়া হলে হিপ্পোক্যাম্পাস শুকিয়ে ছোট হয়ে যায়। যখন এটি ভালো থাকে, এটি বিভিন্ন স্মৃতি সংগ্রহ করে জায়গা মতো গুছিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু হিপ্পোক্যাম্পাস যখন নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সে আর স্মৃতি গুছিয়ে রাখতে পারে না। তখন তিনি ডিমেনশিয়ায় ভোগেন।
কোন বয়স থেকে এ রোগটি শরীরে বাসা বাঁধে : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমবেশি সবারই ভুলে যাওয়া বা ডিমেনমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। মূলত প্রবীণ ব্যক্তিরাই এ রোগে ভোগেন বেশি। ৬০ বছরের কম রোগীদের হার ০.১ শতাংশ, ৬০-৬৪ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ১ শতাংশ, ৬৫-৮৪ বছর বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ৩ থেকে ১১ শতাংশ এবং ৮৫ বছরের বেশি বয়সী রোগীদের মধ্যে এ রোগের হার ২৫ থেকে ৪৭ শতাংশ। ডিমেনশিয়ার কোনো প্রতিকার নেই, তবে জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন এনে এটি রোধ করা যায়।
ডিমেনশিয়া ঝুঁকি কমাতে যা করবেন
স্বাস্থ্যকর খাবার : স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অতি প্রয়োজনীয়। এতে ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি কমে। ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং চর্বিহীন প্রোটিনের উৎস সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে এবং স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে সহায়তা করে।
নিয়মিত ব্যায়াম : নিয়মিত ব্যায়াম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। এতে ডিমেনমিয়ার ঝুঁকিও কমে।
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা : স্থূলতা ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণে সবারই খাবার খাওয়া এবং ব্যায়ামের সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখার চেষ্টা করা উচিত।
ধূমপান : ডিমেনশিয়াসহ অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যার কারণ ধূমপান। এ কারণে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে ধূমপান ত্যাগ করা প্রয়োজন।
অ্যালকোহল সেবন : ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য অ্যালকোহল সেবন সীমিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত ঘুম : মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পর্যাপ্ত ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যা হলে ডিমেনশিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ কারণে সবার প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।