স্বাস্থ্যকথা ডেস্ক : বুকে হওয়া হঠাৎ ব্যথাকে অনেকেই গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা ভেবে ভুল করেন। কেউ ভাবতেই চায় না যে এই ব্যথা হার্টেরও হতে পারে। এমন হলে প্রথমে ব্যথার ধরন বুঝতে এবং সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে-
হার্টের ব্যথার লক্ষণসমূহ-
কিছু উপসর্গ আছে, যা হলে মনে করতে হবে হার্টের কোনো সমস্যার কারণে তা হচ্ছে এবং রোগী হার্ট অ্যাটাকের দিকে যাচ্ছে। যেমন-
* হার্টের সমস্যার কারণে ব্যথা হলে তা বুকের একেবারে মাঝখানে চাপ ধরা ব্যথা বা বুকের মধ্যে কিছু চেপে আছে এমনটি মনে হবে।
* হাঁটলে বা সিঁড়ি ভাঙলে বুকের এই চাপ ধরা ভাব বেড়ে যাবে।
* ব্যথা ধীরে ধীরে চোয়াল, ঘাড় বা পিঠের দিকে চলে যেতে পারে। একে বলে অ্যানজাইনাল পেইন।
* শরীর প্রচন্ড ঘেমে যাবে।
* কোনো ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
* মুখের রং ফ্যাকাসে বা কালচে হয়ে যেতে পারে।
* ক্রমান্বয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসবে।
* এ ধরনের ব্যথা ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মতো স্থায়ী হতে পারে।
এরকম হলে করণীয়
* এরকম মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে চারটি ডিসপ্রিন ট্যাবলেট পানিতে গুলে বা চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতে হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমে যাবে।
* পাশাপাশি জিবের নিচে নাইট্রেট স্প্রে বা ট্যাবলেট দিয়ে রোগীকে দ্রুত হৃদরোগের চিকিৎসা আছে এমন হাসপাতালে নিন।
* হার্ট অ্যাটাক হলে দু-তিন ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে সঠিক চিকিৎসা দিলে রোগী ভালো হয়ে যায়। এর আগে ইসিজি, ইকো-কার্ডিওগ্রাম ও ট্রপটি-টি পরীক্ষা করালে সমস্যাগুলো জানা যাবে।
ডায়াবেটিস রোগীরা অ্যানজাইনাল পেইন বুঝতে পারে না। যে নার্ভটি মস্তিষ্ক থেকে এই ধরনের ব্যথার অনুভূতি বহন করে, ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সেই নার্ভটি কাজ করে না।
তবে আজকাল নন-ডায়াবেটিস রোগীরাও অনেক সময় অ্যানজাইনাল পেইন টের পায় না। ব্যথাটি গ্যাসের ব্যথার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে এবং সেই ধরনের ওষুধ সেবন করে। এতে সাময়িক স্বস্তি মিললেও হার্টের সমস্যা হলে পরে তা বড় আকারের বিপদ ডেকে আনতে পারে। আসলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হার্টের জন্য না হলেও ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু হার্টের।
এই রোগের চিকিৎসা
* রক্তনালির ভেতরের কোনো জায়গায় ব্লক তৈরি হয়ে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সেটি হার্ট অ্যাটাক। তখন প্রাইমারি এনজিওপ্লাস্টি (বেলুন) করে ব্লক খুলে স্টেন্ট বসিয়ে দেয়া হয়।
* হার্টের তিনটি প্রধান ধমনি থাকে। এগুলোতে সমস্যা হলে তাকে থ্রি ভেসেলস ডিজিজ বলে। এগুলোর মধ্যে এলএডি আর্টারিটি (বাঁ দিকের) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হার্টের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রক্ত এটিই সরবরাহ করে।
* যদি ট্রিপল ভেসেলস ডিজিজ হয় অর্থাৎ তিনটি আর্টারিই ক্ষতিগ্রস্থ হয়, পাশাপাশি হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে যায়, তখন বাইপাস সার্জারি করতে হবে।
এর থেকে বাঁচতে হলে করণীয়
* প্রতিদিন কমপক্ষে চার কিলোমিটার হাঁটুন।
* ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
* ভাত, রুটি, আলুর মতো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিন।
* প্রতিদিনের খাবারে তেলের পরিমাণ ১৫ থেকে ২০ মিলিলিটার করুন। মাসে তিন-চার দিন নিয়মের ব্যতিক্রম হলে অসুবিধা নেই। তবে বাকি দিনগুলো এভাবেই চলতে হবে।
* ধূমপান একেবারেই নয়।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।