পাট পণ্যে শিক্ষার্থী তানজিলার আয় মাসে ৬০ হাজার টাকা
সাজেদুর আবেদীন শান্ত ঃ উম্মে তানজিলার জন্ম ও বেড়ে ওঠা গাজিপুরের কোনাবাড়িতে। ছয় ভাইবোনের মধ্য তানজিলা সবার ছোটো। তানজিলার ছোটোবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো ডাক্তার হওয়ার। সাদা এ্যাপ্রোন আর নামের আগে ডা. থাকবে এমনটাই ছিলো তার ও পরিবারের স্বপ্ন। কিন্তু সে স্বপ্ন পুরন হলো না তার। পরে স্নাতকে ভর্তি হলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গাজীপুরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে।
তানজিলার স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় কিছুটা মনোবল হারান। ভাবেন অবসর সময় কাটাতে কিছু একটা করবেন তিনি। এরপর তানজিলা তার নিত্যদিনের সঙ্গী ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে হয়ে যান উদ্যোক্তা। শুরু করেন নিজের নতুন উদ্যোগ ‘উপন্তিক’। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কয়েক মাসের মধ্যেই সাফল্যের দেখা পান তিনি। বর্তমানে তিনি একটা ছোট কারখানার মালিক। যেখানে তার সাথে বেতনভুক্ত ভাবে কাজ করেন আরও পাঁচ জন। শুধু তাই না এ উদ্যোগ থেকে তানজিলার মাসিক আয় এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
শুরুর গল্প জানতে চাইলে তানজিলা বলেন, ‘শুরুটা মোটেও সহজ ছিলো না। শুরুর দিকে খুব ভয় পাচ্ছিলাম। বাজেট কম ছিলো। একটা টাকাও যেনো নষ্ট না হয় সেটা ভাবতাম। পড়াশোনার জগত থেকে একদম আলাদা জগত হচ্ছে ড্রেস। তাই খুব কম পুজিতেই কাজ শুরু করলাম’। তিনি আরও বলেন, ‘একদিন আমি বসে বসে রঙ করছিলাম। আমার বড় আপু বললো তোর কালার কনসেপ্টতো বেশ ভালো। সেখান থেকেই ভাবলাম ড্রেস নিয়ে কাজ করবো। চাকরি আমার কখনোই পছন্দ ছিলো না। তাই নিজে কিছু করবো সেই ধারণা নিয়েই ব্লক বাটিকের কাজ শুরু করলাম। আর এই ভাবনাটাই আমার লাইফের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। ব্লক-বাটিক থেকে পরে পাট পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করলাম’।
পাট পণ্য নিয়ে কাজ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ’পাট পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করাটা হঠাৎ করেই। খুব চিন্তা ভাবনা করে যে, পাটের কাজ শুরু করেছি তা নয়। আমি পাট সম্পর্কে কিছুই জানি না। ব্যাগ বানানোর কোনো ধারণাও নেই। তাও অনেক সাহস নিয়ে শুরু করলাম। বাজার ঘুরলাম। রোদ-বৃষ্টি, ঢাকা শহরের জ্যাম কোনো কিছুই আমাকে থামাতে পারেনি। ব্যাগ বানানোর কোনো প্রশিক্ষণও আমার ছিলো না। নিজে নিজেই কাজ শুরু করি। ইউটিউব দেখে কাজ করতাম। এক একটা ভিডিও কয়েকবার করে দেখে দেখে কাজ করতাম। এখন আর ইউটিউব লাগে না। এখন ব্যাগের ছবি দিলে নিজেই করতে পারি। এভাবেই পাট নিয়ে কাজ করা’।
আরও পড়ুনবর্তমানে তানজিলা পাটের সিম্পল লাঞ্চ ব্যাগ থেকে জুট কটনের হ্যান্ড ব্যাগ, লাঞ্চ ব্যাগ, ল্যাপটপ ব্যাগ, স্কুল ব্যাগ, কয়েন ব্যাগসহ ২০/২২ রকমের ব্যাগ নিয়ে কাজ করছেন। গাজিপুরের কোনাবাড়িতে তার নিজস্ব কারখানায় প্রস্তুতকৃত এসব ব্যাগকে দৃষ্টিনন্দন করতে হ্যান্ড পেইন্টিংসহ সুঁই সুতার নানান কারুকাজ করে থাকেন।
তানজিলা জানান, প্রথম দিকে এসব কাজে খুব ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। শুরুর দিকে ব্যাগ বানানোর কাঁচা মালের সোর্সিং পেতে খুব কষ্ট হয়েছে। ব্যবসায় গুরুত্বপুর্ণ কাজ হচ্ছে কোথায় ভালো জিনিস খুঁজে পাওয়া যায় সেটা বের করা। আর এ ক্ষেত্রে তাকে সব থেকে বেশি সহযোগিতা করেছে তার মা। তানজিলা বলেন, ‘আম্মু সব সময় বলত তুই পারবি। কাজ খুব সুন্দর হচ্ছে, চালিয়ে যা’।
তানজিলার ইচ্ছা তার উদ্যোগ ‘উপন্তিক’ একদিন অনেক বড় হবে। তিনি জানান, তার ভাবনা এখন একটাই তা হলো উপন্তিককে একটি ব্রান্ডে রুপান্তর করা। যেন তাকে না জানলেও তার উপন্তিককে সবাই যেনো জানে। তার মাধ্যমে যেনো আরও কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।
মন্তব্য করুন